ভারতীয় আর্য ভাষার তিনটি স্তর আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণি | বাংলা |


ভারতীয়
আর্য ভাষার তিনটি স্তর 


    ইন্দো
ইউরোপীয় ভাষা বংশের
9 টি ভাষা গোষ্ঠীর
একটি হল ইন্দো-ইরানীয়। ইন্দো-ইরানীয় গোষ্ঠী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ইরান-পারস্যে
অন্যটি ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ভারতে আগত এই জনগোষ্ঠীর ভাষাই ভারতীয় আর্য ভাষা
নামে পরিচিত। আনুমানিক
1500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ
থেকে বিবর্তনের নানা স্তর পেরিয়ে আজও নব নব রূপে সেই আর্যভাষা বেঁচে আছে। ভারতীয়
আর্য ভাষার বিবর্তনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়-

 

১. প্রাচীন
ভারতীয় আর্য (
OIA)-

          • আনুমানিক সময়সীমা: 1500- 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ

          • নিদর্শন : ঋগ্বেদ, সংহিতা, অন্যান্য বেদ ও
সংস্কৃত সাহিত্য

২. মধ্য
ভারতীয় আর্য (
MIA)-

          • আনুমানিক সময়সীমা: 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ- 900 খ্রিস্টাব্দ

          • নিদর্শন: জৈন ও
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ
, অশোকের শিলালিপি

৩. নব্য
ভারতীয় আর্য (
NIA)-

          • আনুমানিক সময়সীমা: 900 খ্রিস্টাব্দ- বর্তমান কাল

          • নিদর্শন: আধুনিক ভারতীয়
সাহিত্য

 

          ভারতীয় আর্য ভাষার প্রথম স্তর হল প্রাচীন ভারতীয় আর্য।
আনুমানিক
1500- 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল। এই সময়কালের
মধ্যে দুটি ভাষার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।

a. বৈদিক ভাষা– যার সাহিত্যিক নিদর্শন ঋকবেদ সহ অন্যান্য বেদ।

b. বৈদিক ভাষার বিকৃতি প্রতিরোধ করে পাণিনির “অষ্টাধ্যায়ী” ব্যাকরণের
দ্বারা সংস্কার করা “সংস্কৃত ভাষা”
, “কালিদাস”, “ভবভূতি”
প্রমুখের রচনায় যার নিদর্শন মেলে। তবে সাহিত্যিক রূপের পাশাপাশি সংস্কৃতের একটি
কথ্যরূপও প্রচলিত ছিল।

 

            ভারতীয় আর্য ভাষার দ্বিতীয় স্তর হলো মধ্য ভারতীয় আর্য। আনুমানিক
600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে 900 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এই স্তরটি
বিস্তৃত ছিল। কথ্য সংস্কৃত থেকেই বিবর্তনের ফলে মধ্য ভারতীয় আর্যের জন্ম। মধ্য
ভারতীয় আর্যের আবার তিনটি স্তর বর্তমান। এর প্রথম স্তর “পালি”- যার
সময়সীমা
600 থেকে 200 খ্রিস্টপূর্বাব্দ। পালি ভাষার নিদর্শন পাওয়া যায় বৌদ্ধ
ধর্মগ্রন্থ “ত্রিপিটক”- এ। মধ্য ভারতীয় আর্যের দ্বিতীয় স্তর প্রাকৃত।
সংস্কৃতের মূল উপাদান থেকে আগত লোকসাধারণ বা প্রাকৃতজনের মুখের ভাষাই হলো প্রাকৃত।
এর সময়সীমা
200 খ্রিষ্টপূর্ব থেকে 600 খ্রীস্টাব্দ। অঞ্চল ভেদে এর পাঁচটি রূপ ছিল-মাগধী প্রাকৃত, অর্ধমাগধী প্রাকৃত, শৌরসেনী প্রাকৃত, মহারাষ্ট্রী
প্রাকৃত এবং পৈশাচী প্রাকৃত।

গাহাসত্তসঙ্গ
এবং সংস্কৃত নাটকে এর নিদর্শন মেলে। মধ্য ভারতীয় আর্যের তৃতীয় স্তর হলো অপভ্রংশ
যা প্রাকৃত ভাষাগুলির বিকৃতির ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। এর সময়সীমা
600-900 খ্রিস্টাব্দ। মহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, মাগধী প্রভৃতি ৫টি প্রাকৃত থেকে ৫টি
অপভ্রংশের জন্ম হয়। এরা হলো-মাগধী
, অর্ধমাগধী, শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী এবং পৈশাচী অপভ্রংশ। এদের কোনো সাহিত্যিক
নিদর্শন নেই।

 

           ভারতীয় আর্য ভাষার তৃতীয় স্তর হলো নব্য ভারতীয় আর্য। 900 খ্রীষ্টাব্দ থেকে বিভিন্ন অপভ্রংশ ভাষা থেকে ভারতের অঞ্চল
বিশেষে যে সমস্ত ভাষা সৃষ্টি হয়ে আজও প্রচলিত সেই সমস্ত ভাষাকেই নব্য ভারতীয়
আর্য ভাষা বলা হয়। নব্যভারতীয় আর্যভাষা গুলির মধ্যে মহারাষ্ট্র অপভ্রংশ থেকে
মারাঠী
,
কোঙ্কনী ভাষা; শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে নেপালি, কুমায়ুনী এবং
গাড়োয়ালি
; পৈশাচী অপভ্রংশ থেকে সিন্ধি এবং
পাঞ্জাবি
;
অর্ধমাগধী অপভ্রংশ থেকে অবধী, বাঘেলি, ছত্তিশগড়ী এবং মাগধী অপভ্রংশ থেকে
মৈথিলী
,
মগহী, ভোজপুরী, ওড়িয়া, অসমীয়া এবং আমাদের
মাতৃভাষা বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। কালক্রমে এসব ভাষার আবার উপভাষা ও সৃষ্টি
হয়েছে। 




Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top