‘Art imitates Nature’-তাই
বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের রচনায় প্রকৃতি নানাভাবে এবং রূপে উপস্থাপিত হয়েছে।জীবনানন্দ
দাশ প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতির রূপ চিত্র অংকনে তার জুড়ি মেলা
ভার। তাই রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘জীবনানন্দের কবিতা চিত্ররূপময়’।তার “শিকার” কবিতায় আরণ্যক প্রকৃতির অনুপম চিত্র রচিত হয়েছে অসাধারণ
শব্দ সজ্জার মাধ্যমে।
●প্রথম ভোরের প্রকৃতি –
শীত ঋতুর এক উজ্জ্বল ভোর। ঘাসফড়িঙের
দেহ নিংড়ে যেন নীল রঙে রেঙেছে আকাশ। তারই নীচে পেয়ারা
নোনা গাছের পাতায় সবুজের সমারোহ। কবির ভাষায় -“চারিদিকে পেয়ারা ও নোনার গাছ
টিয়ার পালকের মতো সবুজ “।প্রভাত আলোর মধ্যে তারারা মুখ লুকালেও একটি তারা তখনও অম্লান- পাড়াগাঁর বাসরঘরের
সলজ্জ নববধূর মত একাকী। কিংবা মিশরীয় রমণীর বুকের মুক্তার মতো উজ্জ্বল অথবা অথচ একাকীত্ব
বিশিষ্ট।
শুধু গাছপালা
আর আকাশ নক্ষত্র নয়। কবি বর্ণনা করেছেন আরণ্যক মানুষদের কথা- “হিমের রাতে শরীর
“উম”রাখবার জন্যদেশোয়ালিরা সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলেছে।”
দরিদ্র মানুষগুলোকে উত্তাপ দিয়ে প্রভাত রশ্মিতে তা বিবর্ণ হয়েছে।কুমকুমের
মতো সেই রং এখন রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো। সকালের আলোয় আর শিশির কণায়
টলমল আকাশে নীল আর অরণ্যের সবুজ মিলে মিশে একাকার। সে যেন ময়ূরপুচ্ছের সবুজ আর নীলের
অপরূপ বর্ণ বিচ্ছুরণ।
“…………চারিদিকের
বন ও আকাশ ময়ূরের সবুজ
নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে”।
কবিতার প্রথমাংশে এভাবেই এক শান্ত স্নিগ্ধ অনাবিল আরণ্যক ভোরের মনকে ছুঁয়ে
যাওয়া দৃশ্যপট রচিত হয়েছে।
●দ্বিতীয় ভোরের প্রকৃতি –
একই কবিতার মধ্যে একই ভোরের
বিভিন্ন চিত্র নির্মিত হয়েছে। এখানে প্রকাশ পেয়েছে স্বাভাবিক বন্যতা।অরণ্য সুলভ হিংস্রতা
আর খাদ্য ও খাদকের নিশ্চিত সম্পর্ক থেকে মুক্তির ইঙ্গিত।চিতাবাঘিনীর হাত থেকে আত্মরক্ষার
আতঙ্কিত রাত পেরিয়ে একটি সুন্দর বাদামি হরিণ নেমে আসে প্রভাত-আলোয়। পেয়ে যায় ঘাস
খাওয়ার মত দু’দণ্ড অবকাশ।নদীর স্রোতে অবগাহন করে ক্লান্তি ঝরিয়ে দিয়ে প্রাণস্ফূর্তিতে
পূর্ণ হতে চায় সে। চায় আপন সাহসে সাধে আর সৌন্দর্যের হরিণীদেরকে মুগ্ধ করতে। কিন্তু
এমনি স্বপ্নময় সৌন্দর্য আর আকাঙ্ক্ষা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সভ্য মানুষের গুলির আঘাতে
।নিজের রক্তে নদীর জলকে মচকা ফুলের বর্ণ বাহারে ভরিয়ে দিয়ে সে বিদায় নেয় আরণ্যক
জীবন থেকে চির ঘুমের দেশে। টেরিকাটা মাথার ধূমপায়ী আততায়ীর লকলকে জিভ স্বাদ নেয় হরিণের মাংসের।সভ্যতার আগ্রাসনে গ্রস্ত ও আক্রান্ত হয় আরণ্যক শান্তি,
সৌন্দর্য ও পবিত্রতা। এভাবে উপমা ,রূপক, চিত্রকল্প এবং ব্যঞ্জনাময় শব্দ প্রয়োগে প্রকৃতির
চিত্র প্রাণময় হয়ে উঠেছে।