“সেকালে ঘনঘন সাকা হত”- সাকা কি? কোথায় সাকা হয়েছিল? সাকা হলে
গল্প শ্রোতাদের বাড়িতে কি হতো? গল্প শ্রোতা সাকার তাৎপর্য কী ভাবে উপলব্ধি করেন? অলৌকিক। Class 12 Bengali Note with PDF
“সাকা” হলো কোন মহৎ আদর্শ বা লক্ষ্যের
জন্য আত্মত্যাগ বা মৃত্যুবরণ। “অলৌকিক” গল্পে শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম, জাতীয়তা
ও সম্মান রক্ষার জন্য যে আত্মদান তাকেই “সাকা” বলা হয়েছে।
পূর্বে যে অঞ্চলের নাম ছিল হাসান আব্দাল এর জঙ্গল, পরে
গুরু নানকের অলৌকিক ক্ষমতার স্মারক হিসেবে তার নাম হয়েছিল পাঞ্জা সাহেব। সেই পাঞ্জাসাহেবেই সাকা
হয়েছিল।
কোথাও সাকা হলে বা মহৎ উদ্দেশ্যে আত্মদানের ঘটনা ঘটলে গল্প শ্রোতাদের বাড়িতে
অরন্ধন পালিত হত। রাতে মেঝেতে শোয়া হতো। এভাবে উপবাসে থেকে মেঝেতে শুয়ে আত্মোৎসর্গের
স্মরণে কৃচ্ছসাধনই ছিল এর উদ্দেশ্য।
সাকার তাৎপর্য গল্প শ্রোতার কাছে অজানাই ছিল।
কিন্তু একবার সাকার খবর শুনে মা এবং বোনের সঙ্গে তিনি পাঞ্জা সাহেব যান এবং এক আশ্চর্য
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হন। সেদিন দূরের এক শহরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক জমায়েতে নিরস্ত্র
ভারতীয়দের উপর গুলি চালায় ফিরিঙ্গিরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বহু শিশু থেকে বৃদ্ধ
এবং মহিলা। বাকিদের কয়েদ করে অন্যত্র জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। কয়েদিদের খাদ্য ও
পানীয়ের ব্যবস্থা ছিল না। আবার হুকুম ছিলো ট্রেন কোথাও থামানো যাবেনা। পাঞ্জা সাহেবের
গুরু নানক মর্দানার তৃষ্ণা নিবারণ করেছিলেন। তাই পাঞ্জা সাহেবের লোকজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
হলেন যে ক্ষুধার্ত- তৃষ্ণার্ত সংগ্রামীদের অভুক্ত অবস্থায় এখান থেকে যেতে দেওয়া যায়
না। তারা রুটি,পায়েস, লুচি, ডাল প্রভৃতি খাদ্য স্টেশনের ডাই করে রাখে। ট্রেন থামানোর
জন্য স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন নিবেদন করা হয়। কিন্তু যখন সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ
হয় তখন তারা পুরুষ, নারী, শিশু নির্বিশেষে রেললাইনের উপর শুয়ে পড়েন। ট্রেন হুইসেল
দিতে দিতে কয়েকজনকে পিষ্ট করে অবশেষে থেমে যায়। খালপাড়ের সেতুর দিকে বয়ে যায় রক্তের
স্রোত।
এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত বিহ্বল হয়ে পড়েন। তার মনের
মধ্যে ওঠে আলোড়ন। হঠাৎ যেন এক অকাট্য যুক্তি তার পূর্বের সর্ব ধারণাকে ভ্রান্ত করে
দেয়। মানুষের মধ্যে মহৎ উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগের প্রবল ইচ্ছাশক্তির সন্ধান পান। দেশপ্রেমিক
দের কাছে খাদ্য ও পানীয় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগ বা মৃত্যুবরণই যে সাকার তাৎপর্য তা বুঝতে
পারেন। উপলব্ধি করেন মহৎ উদ্দেশ্যেআত্মত্যাগ ই হল সাকা।