কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো |

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

 



ভূমিকা: “জীবনকে
আমি যেভাবে ও যত ভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে
আমি লিখি”- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলা সাহিত্যে তিন
বন্দ্যোপাধ্যায় নামে খ্যাত তিন কথাসাহিত্যিকের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য নাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
(১৯০৮-১৯৫৬)

 

 অতি সংক্ষিপ্ত জীবনী:
সাঁওতাল পরগনার দুমকায় ১৯ শে মে ১৯০৮ খ্রি তাঁর জন্ম হয়। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়,
মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁর আসল নাম ছিল প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্র আন্দোলন
ও তেভাগা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। প্রগতি লেখক শিল্পী সংঘের নেতৃত্ব
ছিল তাঁর হাতেই।

 

 সাহিত্য পরিচয়:
তাঁর মোট উপন্যাসের
  সংখ্যা প্রায় ৩৯
টি।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য “দিবারাত্রির কাব্য”(১৯৩৫), “পুতুল নাচের ইতিকথা”(১৯৩৬),”পদ্মানদীর
মাঝি”(১৯৩৬), “শহরতলী”(১৯৪০-৪১), “অহিংসা”(১৯৪১), “প্রতিবিম্ব”(১৯৪৩),
“শহরবাসের ইতিকথা(১৯৪৬), চিহ্ন”(১৯৪৭), “চতুষ্কোণ”(১৯৪৮),
“স্বাধীনতার স্বাদ”(১৯৫১), “সার্বজনীন”(১৯৫২), “আরোগ্য”(১৯৫৩),
“নাগপাশ”(১৯৫৩), “হলুদ নদী সবুজ বন”(১৯৫৬),”মাঝির ছেলে”(১৯৬০)
ইত্যাদি।

          মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মোট গল্প গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় 16 টি। এর মধ্যে “অতসীমামী ও অন্যান্যগল্প”(১৯৩৫),
“প্রাগৈতিহাসিক”(১৯৩৭), “মিহি ও মোটা কাহিনী”(১৯৩৮), “সরীসৃপ”(১৯৩৯),
“ভেজাল”(১৯৪৪), “হলুদপোড়া”(১৯৪৫), “ছোটো বকুলপুরের যাত্রী”,
“ফেরিওয়ালা”(১৯৫০), “লাজুকলতা”(১৯৫৪) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

 

 কৃতিত্ব ও বৈশিষ্ট্য:

✡ বিষয়বস্তু: প্রধানত
পূর্ববঙ্গের পরিবেশ এবং ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন চিত্র তিনি অপূর্ব দক্ষতার
সঙ্গে অঙ্কন করেছেন।

 জৈব সত্তার বিকার: তাঁর উপন্যাসে একদিকে যেমন বাস্তবনিষ্ঠ জীবন ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি মানুষের কামপিপাসা,
নর-নারীর জৈব সত্তা ও তার নানা বিকারের রেখাচিত্র ও ফুটে উঠেছে তাঁর রচনায়।

 প্রভাব: তাঁর রচনার
প্রথম পর্বে (মনোবিদ) ফ্রয়েড- এর প্রভাবে জৈব প্রবৃত্তির আতিশয্য এবং দ্বিতীয় পর্বে
মার্কসীয় প্রভাবে প্রকট উদ্দেশ্য প্রবনতার প্রকাশ ঘটেছে। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সমসাময়িক আর্থসামাজিক সমস্যা ও স্থান পেয়েছে তাঁর রচনায়।

 বৈজ্ঞানিক নির্মোহ
দৃষ্টি:
তিনি একদিকে যেমন ছিলেন রোমান্টিক ভাবাবেগ বর্জিত বাস্তবের রূপকার তেমনি অন্যদিকে
বৈজ্ঞানিক নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে তিনি জগৎ ও জীবনকে বিশ্লেষণ করেছেন।

 তাঁর ছোট গল্প গুলির
প্রথম পর্বে মধ্যবিত্ত জীবনের মনস্তত্ত্বকে এবং পরবর্তী শ্রমজীবী ও কৃষকদের সামূহিক
জীবনবোধ ও গণচেতনা সঞ্চারে সচেষ্ট হয়েছেন।

 উপন্যাস ও ছোটগল্পের
রীতি, বিষয়বস্তু, প্রকাশভঙ্গি, জীবনের বাস্তব সত্য উদঘাটন- সব ক্ষেত্রেই তিনি অভিনবত্বের
স্বাক্ষর রেখেছেন।

 

 সমালোচনা: তবে তাঁর
সৃষ্ট চরিত্রগুলির মনঃপ্রকৃতি ও সৃষ্টিকলার মধ্যে কিছু বিশৃংখলা সাহিত্যরসকে ক্ষুন্ন
করেছে। প্রগতির নামে উৎকট রাজনীতি ও উদ্ভট সমাজনীতির কচকচির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তাঁর
শিল্পীজীবনের অপমৃত্যু ঘটে। তবুও বলা যায় যে গল্প উপন্যাসে তাঁর পেশল হাতের স্পর্শ
বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।


✮ ছোটোগল্পকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব আলোচনা করো

✮ আধুনিক বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান আলোচনা করো

 কথাসাহিত্যে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়/ বনফুলের অবদান আলোচনা করো

✮ বাংলা গদ্য সাহিত্যে নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো

✮ কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান বর্ণনা করো

✮ বাংলা কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

✮ আধুনিক কাব্য সাহিত্যে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

✮ আধুনিক বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top