কথা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো |

কথা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

 



 ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর
বাংলা কথাসাহিত্যে যখন অবক্ষয়িত নর-নারীর অন্তর্জীবনের জটিল সমস্যা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চলছে তখন পল্লী বাংলার প্রকৃতি এবং তার কোলে লালিত নর-নারীকে নিয়ে আপন স্বতন্ত্র ও
স্বমহিমায় বাংলা কথাসাহিত্যের উন্মুক্ত ক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়(১৮৯৪-১৯৫০)।

 

 সাহিত্য সম্ভার:
বারোটি উপন্যাস এবং প্রায় দু’শয়ের ও বেশী গল্প রচনা করেছিলেন বিভূতিভূষণ। তাঁর গল্পগুলি
প্রায় 29 টি গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল – “পথের
পাঁচালী”, “অপরাজিত”, “আদর্শ হিন্দু হোটেল”, “বিপিনের
সংসার”, “দৃষ্টিপ্রদীপ”, “দেবযান”, “ইছামতী” ইত্যাদি।
“মেঘমল্লার”, “মৌরিফুল”, “যাত্রাবদল”, “জন্ম ও
মৃত্যু”, “কিন্নরদল”, “অনুসন্ধান” প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ
হিসাবে আজও পাঠক হৃদয়ে রসসঞ্চার করে চলেছে।

 

 অবদান ও বৈশিষ্ট্য:

বিভূতিভূষণ প্রকৃতিপ্রেমিক
সাহিত্যশিল্পী। “ইছামতি”,”তৃণাঙ্কুর”, “আরণ্যক”,
“পথের পাঁচালী” প্রভৃতি উপন্যাসে মাটি, মানুষ ও অরণ্য প্রকৃতিকে নিয়ে তিনি
এক আশ্চর্য স্নিগ্ধ মধুর স্বতন্ত্র জগৎ সৃষ্টি করেছেন।

জীবনের দ্বন্দ্ব
সংঘাত ও রহস্যময়তায় প্রবেশ না করে তিনি সহজ-সরল, শান্ত জীবনের সৌন্দর্য দর্শন ও উপস্থাপন
করেছেন তাঁর রচনায়।

সংঘাতময় জীবনযন্ত্রণার
পরিবর্তে বিভূতিভূষণ আনন্দময় জগতের সন্ধান করেছেন। তিনি বিশ্লেষণপন্থী নন আস্বাদন
পন্থী।

• আমাদের চেনাজানা
জীবনের তুচ্ছতম ও অতি সাধারণ উপকরণকে তিনি আপন প্রতিভার ছোঁয়ায় অসাধারণ রূপ দিয়েছেন।

ঘর ভোলা মুগ্ধদৃষ্টি
কিশোরের মতো তিনি তাঁর রচনায় প্রতিদিনের প্রকৃতির নব নব রহস্য উন্মোচন করেছেন এবং
এই সৌন্দর্য সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বরূপের সন্ধান পেয়েছেন।

• প্রকৃতি বর্ণনা, শৈশব
চিত্র ও বাস্তবতার মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিকতায় উত্তরণের কাহিনী তাঁর উপন্যাসগুলিকে আভিজাত্য
দান করেছে।

• তাঁর উপন্যাস ও গল্পে
মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে নিগূঢ় যোগ সাধন করেছেন এবং প্রকৃতির কোলে লালিত মানুষের জীবন
লীলার চিরন্তন বৈশিষ্ট্যকে মহিমা দান করেছেন।

 

 গল্পের বৈশিষ্ট্য:

তাঁর সমালোচনার কাহিনী
“বোতাম”, “বিড়ম্বনা” প্রভৃতি গল্পে প্রেমানুভূতির রোমান্টিক চিত্র
রচনার দক্ষতা প্রকাশিত।

বিভূতিভূষণের অনেক
গল্পে অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক ঘটনার সন্নিবেশে কিশোরমনের উপযোগী ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

• প্রকৃতি বর্ণনা তাঁর
রচনার মূল সুর – ছোটগল্পগুলি সে সুর থেকেও বঞ্চিত হয়নি। “নদীর ধারে বাড়ি”,
“শাবলতলার মাঠ” প্রভৃতি গল্প তারই নিদর্শন।


 উপসংহার: তাঁর উপন্যাস ও ছোটগল্পের রস প্রায় একই। কাহিনী, প্রতিবেগ, নর নারীর স্বভাব চরিত্র – সবই উপন্যাসের মতো শান্ত, মধুর ও প্রাকৃতিক। কেবল তা উপন্যাসে দীর্ঘায়িত রূপ নিয়েছে। ছোটোগল্পকার হিসেবে বিভূতিভূষণের জনপ্রিয়তা ও কোনো অংশে কম নয়। বাংলা কথাসাহিত্যে অনাবিল প্রকৃতি প্রেমের স্বতন্ত্র সংযোজনে তিনি অসামান্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে রোমান্সধর্মী ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।


✮ কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

✮ ছোটোগল্পকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব আলোচনা করো

✮ আধুনিক বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান আলোচনা করো

 কথাসাহিত্যে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়/ বনফুলের অবদান আলোচনা করো

✮ বাংলা গদ্য সাহিত্যে নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো

✮ কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান বর্ণনা করো

✮ বাংলা কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

✮ আধুনিক কাব্য সাহিত্যে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো

✮ আধুনিক বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top