ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব আলোচনা করো | Semester- I History Note PDF | ClassGhar |


ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব

ইতিহাস
রচনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলিকে একত্রে ইতিহাসের উপাদান বলে। ইতিহাস রচনার যেমন
সাহিত্যিক উপাদান 
রয়েছে,
তেমনি বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করেও যথার্থ ইতিহাস রচনার কাজে অগ্রসর
হওয়া যায়। ইতিহাসের বিভিন্ন 
প্রত্নতাত্ত্বিক
উপাদানের মধ্যে প্রাচীন লিপিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধাতু, প্রস্তরখণ্ড,
ঘরবাড়ি বা মন্দিরের গায়ে লিখিত 
প্রচুর
প্রাচীন লিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই লিপিগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যথা—শিলালিপি,
স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি ইত্যাদি। 
ইতিহাসবিদ
ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন যে, “ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপিগুলির গুরুত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা
সর্বাধিক”- এর 
কারণ
হল-

     লিপিগুলি বিভিন্ন ধাতু, পাথর প্রভৃতির ওপর খোদিত
হয় বলে এগুলি অন্যান্য উপাদানের মতো প্রাকৃতিক কারণে সহজে 
নষ্ট
হয়ে যায় না। তাই লিপি থেকে তুলনামূলকভাবে সঠিক ও নির্ভরযগ্যতা তথ্য পাওয়া সম্ভব।
ইতিহাসের অন্য উপাদানগুলি 
দীর্ঘকাল
ধরে নানা হাতে পড়ে পরিবর্তিত হয়েছে। পুরাণ বা অন্যান্য সাহিত্য দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তিত
ও পরিবর্ধিত হয়েছে। 
পরবর্তীকালে
কাল্পনিক ও পক্ষপাতমূলক বহু তথ্য এগুলিতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু শিলালিপির ক্ষেত্রে
সেই ধরনের বিকৃতি ঘটা 
সম্ভব
হয় না। ফলে লিপিগুলিকে প্রাচীন যুগের তুলনামূলক পক্ষপাতহীন উপাদান হিসেবে গণ্য হয়।

     তাছাড়া, লেখগুলিতে ব্যবহৃত বর্ণমালার আকৃতি ও
বিবর্তন থেকে তার সন-তারিখ অনুমান করা যায়। কোনটি আগের আর 
কোটি
পরের তা বিভিন্ন যুগের লিপির তুলনামূলক বিচারে নির্ণয় করা সম্ভব। লিপিতে ব্যবহৃত পাথর
থেকে সে যুগের

ভাস্কর্যশিল্পের
এবং ধাতু থেকে সে যুগের ধাতুশিল্পের উৎকর্ষ সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্য
বা অন্যান্য উপাদান

থেকে
পাওয়া ঐতিহাসিক তথ্যগুলি কতটা সঠিক তা সে যুগের শিলালিপির সঙ্গে তুলনামূলক বিচারের
মাধ্যমে নির্ধারণ করা

যেতে
পারে। অর্থাৎ সাহিত্য অপেক্ষা শিলালিপিতে অনেক যথার্থ তথ্য পাওয়া সম্ভব

     লিপির প্রাপ্তিস্থান থেকে রাজাদের রাজ্যসীমা
সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করা যায়। যেমন অশোকের লিপিগুলির প্রাপ্তিস্থান 
থেকে
তাঁর রাজ্যসীমা সম্পর্কে অনেকটা স্পষ্ট ধারণা করা যায়। এবং অশােকের শিলালিপি ও স্তম্ভলিপিগুলির
পাঠোদ্ধার করার 
ফলে
মৌর্য যুগের অনেক ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেণ রচিত ‘এলাহাবাদ
প্রশস্তি’, সমুদ্রগুপ্তের 
মন্ত্রী
বীরসেন রচিত ‘এরান শিলালিপি’, চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি রচিত
‘আইহােল প্রশস্তি’ কলিঙ্গরাজ 
খারবেলের
হাতিগুম্ফা লিপি’ প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট রাজাদের রাজ্যজয় ও অন্যান্য কৃতিত্বজানতে সাহায্য
করে।

     এছাড়া, নয়নিকার ‘নানঘাট শিলালিপি’, শকক্ষপ
রুদ্রদামনের ‘জুনাগড় লিপি’, গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর ‘নাসিক লিপি’,

প্রতিহাররাজ
প্রথম ভোজরাজের ‘গোয়ালিয়র লিপি’, হেলিওডোরাসের ‘গরুড়ধ্বজ লিপি’, শশাঙ্কের ‘গঞ্জাম
লিপি’, হর্ষবর্ধনের

তাম্রশাসন,
ধর্মপালের ‘খালিমপুর তাম্রলিপি’, উমাপতিধরের ‘দেওপাড়া প্রশস্তি’, কনিষ্কের ‘সম্পট
লিপি’ প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট রাজা বা 
রাজবংশের
যুদ্ধবিগ্রহ , রাজ্যজয়, রাজকীয় নির্দেশ, মন্দির নির্মাণ, ভূমিদান, ধর্মপ্রচার, বিশেষ
কোনো স্মরণীয় ঘটনা ও অন্যান্য 
কৃতিত্ব
জানতে সাহায্য করে।

      বহির্ভারতে পাওয়া কিছু শিলালিপিও ভারত-ইতিহাসের
গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান। বিদেশে প্রাপ্ত শিলালিপিগুলি থেকে সমকালীন ভারতের বৈদেশিক
বাণিজ্য, বিদেশের সঙ্গে। স্কৃতিক যোগাযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। এগুলির মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হল—এশিয়া মাইনরে পাওয়া ‘বােঘাজকোই’ লিপি যা থেকে আর্যদের ভারতে আগমন,
মেসোপটেমিয়া ব্যাবিলনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে জানা যায়। ইরানের বােহিস্তান,
পার্সেপলিশ, নকই রুস্তম প্রভৃতি স্থানে পাওয়া বিভিন্ন লিপি থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে
পারসিক সাম্রাজ্যের বিস্তার সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া তেল-এল-আমরনা’, ‘রুমমিনদেই’
প্রভৃতি লিপিও মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান।

       প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে
লিপি যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ 
নেই।
ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, “প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার
ক্ষেত্রে লিপি সবচেয়ে 
বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসবিদ ফ্লিট বলেছেন যে, “সাহিত্য, স্থাপত্য-ভাস্কর্য, মুদ্রা প্রভৃতি
থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার সত্যতা 
নির্ণয়ে
লিপিগুলি যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে”।


Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top