“শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা
করো।
এই অর্থে- শিক্ষা হল জ্ঞান দানের মাধ্যমে
শিশুর শূন্য মনের ভাণ্ডারকে পূর্ণ করার প্রক্রিয়া। শিশু যখন জন্মায় তখন তার মন থাকে
সরল ও শূন্য! শিক্ষক তার জ্ঞান ও পুঁথিকেন্দ্রিক জ্ঞান প্রদানের দ্বারা শিশুর শূন্য
মনকে পরিপূর্ণ ও ভারাক্রান্ত করে তোলে। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন শিশু মনের এই শূন্য
ভাণ্ডারকে জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণ করাই শিক্ষা। সাধারণভাবে কোনো একটি বিশেষ বিষয়ে
পারদর্শিতা অর্জন করলেই তাকে শিক্ষিত বলা হয়। এই অর্থে নিতান্ত ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ইত্যাদি
শংসাপত্র অর্জিত ব্যক্তিকে, আবার কখনও-বা কেবলমাত্র অক্ষর জ্ঞান জানা ব্যক্তিকেই শিক্ষিত
বলা হয়।
আধুনিককালেও শিক্ষার অর্থ হল জ্ঞান অর্জন। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা
অপরিহার্য। শিক্ষক এখানে পাঠক্রম এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে দিয়ে জ্ঞানের পরিবেশ
গড়ে তোলেন। শিক্ষার্থী সেই জ্ঞানের পরিবেশ থেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। তাই
বলা যায় যে, প্রাচীনকালে জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হলেও আধুনিককালে কেবলমাত্র
জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার লক্ষ্য নয়।
শিক্ষার লক্ষ্য কেবল জ্ঞান অর্জন হলে শিক্ষার
ধারণা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়, কারণ এর ফলে
(১) মানবিক গুণের বিকাশ ব্যাহত হবে : শিক্ষার্থীকে কেবল তার জীবিকা অর্জনের
জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা সরবরাহ করলে, সে হয়তো তার জীবিকা অর্জনে
সক্ষম হবে কিন্তু তার মধ্যে মানবিক গুণগুলির বিকাশ যথাযথভাবে হবে না। ফলে শিক্ষার প্রকৃত
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
(২) ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ হবে না : পাঠক্রম যদি কেবল বিষয়কেন্দ্রিক
তথ্যের সমষ্টি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে শিক্ষার্থী ওই তথ্যগুলিকে কোন রকমে মুখস্থ করে পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হবে। এতে তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ
হবে না।
(৩) অন্তনিহিত সম্ভাবনা বিকশিত হবে না : শিক্ষক কেবল ‘জ্ঞানদাতা’ এবং শিক্ষার্থী
কেবল জ্ঞানগ্রহীতা’
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্যণীয়, শিক্ষক যদি কেবলমাত্র
জ্ঞান প্রদানের দ্বারা শিক্ষার্থীর মনের ভাণ্ডারকে পূর্ণ করতে চায়, তবে শিক্ষার্থীরা
তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ হারাবে। বলা যায় যে, জ্ঞান অর্জন প্রক্রিয়াই শিক্ষা’—এই
ধারণাটি শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট হলেও তা অসম্পূর্ণ। কারণ কেবল জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার
উদ্দেশ্য হলে শিক্ষার অন্য উদ্দেশ্যগুলি ব্যর্থ হবে।