আধুনিক যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্যাবলি |
আধুনিক যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্যাবলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো
» আধুনিক যুগের শিক্ষার
উদ্দেশ্যাবলি : আধুনিক যুগ হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। সারা বিশ্বের মানুষ আজ ইনটারনেটের
মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে। এক দেশের তথ্য অন্য দেশে পাঠাতে বা অন্য
দেশের তথ্য নিজের বাড়িতে বসে পেতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক মুহূর্ত। বিশ্বায়নের ফলে
এক দেশের সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে অন্য দেশের বাজারে। তাই শিক্ষার পুনোনো উদ্দেশ্যগুলিকে
আজ অনেকখানি পরিবর্তিত করা হয়েছে। ৪৬তম আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে (জেনেভা, ২০০১)
শিক্ষার আধুনিক ও যুগোপযোগী কয়েকটি উদ্দেশ্য স্থির করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যগুলি নীচে
আলোচনা করা হল :-
(১) দৈহিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর জন্মসূত্রে প্রাপ্ত দৈহিক সম্ভাবনাগুলির
সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে
তোলার ব্যবস্থা করা। কারণ বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দৈহিক সুস্থতার সঙ্গে শিক্ষার
ইতিবাচক সম্পর্ক আছে।
(২) মানসিক বিকাশ : জন্মসূত্রে প্রাপ্ত মানসিক সম্ভাবনাগুলির বিকাশে
সহায়তা করে শিক্ষার্থীকে আরও উন্নত শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম করে তোলা শিক্ষার অন্যতম প্রধান
উদ্দেশ্য।
(৩) চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। চাহিদা এবং সামর্থ্য
অনুযায়ী শিক্ষার্থীর শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হবে। আধুনিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল
এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে রূপ দেওয়া যাতে সব শিক্ষার্থীই নিজেদের চাহিদা, সামর্থ্য
ও আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
(৪) জ্ঞান অর্জন : আধুনিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে জ্ঞান
অর্জনে সহায়তা করা। এই জ্ঞান হল জগৎসংসারের বিভিন্ন বিষয়কে জানার জ্ঞান, যার বাস্তব
প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থী কেবল জ্ঞানী বলেই পরিচিত হয় না বরং প্রকৃত মানুষ হিসেবেও
চিহ্নিত হয়।
(৫) কাজ করার দক্ষতা অর্জন: শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা বিকাশে সাহায্য করা শিক্ষার
অন্যতম উদ্দেশ্য। জ্ঞান আহরণ করাই যথেষ্ট নয়। ব্যাবহারিক জীবনে জ্ঞান প্রয়োগ করাও
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
(৬) সামাজিক বিকাশ : আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে সমাজের সঙ্গে
পরিচিত হতে সাহায্য করা হয় এবং সামাজিক সমস্যাগুলিকে জেনে শিক্ষার্থী যাতে আগামী দিনে
সমাজের উন্নয়নের কাজে ব্রতী হয় সে-বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
(৭) সংগতিবিধানের শিক্ষা : যে শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে
তাকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে তাকেই সংগতিবিধানের
শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে সমাজে সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে সাহায্য
করে।
(৮) অর্থনৈতিক বিকাশ : আধুনিক শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে
অর্থনৈতিক দিক থেকে সাবলম্বী হতে সাহায্য করা, যাতে সে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয়
অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়।
(৯) একসঙ্গে বসবাসের ধারণা : সারা বিশ্বের শিক্ষাবিদরা এটি মেনে নিয়েছেন যে,
একসঙ্গে মিলেমিশে বাঁচাই হচ্ছে সমগ্র মানবজীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। যে-শিক্ষা এক মানুষকে
অন্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে শেখায়—তা-ই হল প্রকৃত শিক্ষা।
(৯) প্রকৃত মানুষ সৃষ্টি : আধুনিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে ‘প্রকৃত
মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করা। বর্তমান সমাজে পুথিগত জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির সন্ধান
পাওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃত মানুষের সংখ্যা বডড়োই কম। আধুনিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থায়
মানুষ হওয়ার’ শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার
গতানুগতিক উদ্দেশ্যগুলির বেশ কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থির
করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যগুলি বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতির যুগে অত্যন্ত উপযোগী।
শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ থেকে শুরু করে, জ্ঞান অর্জন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, মানুষ
হয়ে ওঠা, সকলের সাথে মিলেমিশে থাকা, সামাজিক প্রগতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
বোঝাপড়া প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করা
হয়েছে।