বৈদিক যুগের চতুরাশ্রম প্রথার উপর টীকা লেখ | চতুরাশ্রম প্রথা |

 বৈদিক যুগের চতুরাশ্রম প্রথার উপর টীকা লেখ | চতুরাশ্রম প্রথা | History Note B.A Semester 1 


চতুরাশ্রম প্রথা

বেদ হল আর্যদের প্রাচীনতম ধর্ম গ্রন্থ ও সাহিত্য। বেদের আর্যদের সমাজ জীবন
সম্বন্ধে ধারণা সুস্পষ্ট হয়েছে। এখানে আর্যরা প্রধানত ব্রাহ্মণ, রাজন্য, বা ক্ষত্রিয়
এবং সাধারন আর্য বা  বৈশ্য এই তিন বর্ণে বা
শ্রেণীতে বিভক্ত বলে উল্লেখিত হয়েছে। আর্যদের এই তিনটি শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য ভারতীয়
জনগণ অনার্য নামে পরিচিত ছিল।

আর্যদের সর্ব প্রাচীন গ্রন্থ ঋকবেদে আর্যদের জীবন ধারায় চতুরাশ্রম বা চারটি
আশ্রমের কথা বলা হয়েছে। সমাজের  প্রথম তিনটি
শ্রেণী অর্থাৎ ব্রাহ্মণ,  রাজন্য ও বৈশ্যের
মধ্যে এই প্রথার প্রচলন ছিল । সেগুলি হল- ব্রাহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বামপ্রস্থ  সন্যাস আশ্রম। চারটি আশ্রমের মধ্যে প্রথম আশ্রম  হল ব্রহ্মচর্য। বাংলাতে ও কৈশরে গুরুর গৃহে থেকে
ব্রহ্মচর্য পালন ও বিদ্যা চর্চা করতে হত।প্রথম আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত এই সময়ে গুরুর
গৃহে ব্যাকরণ, সাহিত্য, ছন্দ, বেদ অন্যান্য দর্শন শিক্ষা এবং অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ব্রহ্মচর্য আশ্রমের পর দ্বিতীয় আশ্রমটি ছিল গার্হস্থ্য আশ্রম। বিদ্যালাভ
সম্পূর্ণ হলে যৌবনে বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন বা গার্হস্থ্য আশ্রয় যাপন ছিল এর অন্তর্ভুক্ত।
এই   আশ্রমে সংসারের সফল  সদস্যের প্রতি কর্তব্য পালন এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন
সকলের প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গার্হস্থ্য আশ্রমকে অন্যান্য
সকল আশ্রমের মূল ভিত্তি বলে অভিহিত করা হয়েছে।

এরপর তৃতীয় অশ্রমটি হল পৌর  অবস্থায়
বামপ্রস্থ অবলম্বন। এই সময় উপযুক্ত সন্তানের উপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করে
সংসার ও ধন-সম্পদ থেকে নির্লিপ্ত থাকায় সাধারন কথা বলা হয়েছে। এই সময় সংসারের সম্পত্তি
ও পরিজনদের প্রতি মায়া ত্যাগ করে পরলোক চিন্তা এবং অরণ্য বাস ছিল প্রধান কর্তব্য।

সর্বশেষ ও চতুর্থ আশ্রমটি ছিল সন্ন্যাস আশ্রম। এই সময়ে ইহলৌকিক বিষয়ে
নিরর্থক হয়ে ঈশ্বর চিন্তা করা এবং সন্ন্যাস জীবন নিয়ে পরিব্যাদকের মতো বিভিন্ন স্থানে
পরিভ্রমন করা ছিল সন্ন্যাস আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। এই পর্যায়ে প্রকৃত সত্যের সন্ধান
এবং যথার্থ সত্যের উপলব্ধি করে জীবনকে মহাবিশ্বের সঙ্গে অভিন্ন বলে উপলব্ধি করা সন্ন্যাস
আশ্রমের প্রকৃত লক্ষ্য  ছিল।

       এভাবে
আর্যরা তাদের  সমগ্ৰ জীবনকে চারটি পর্যায়ে
বিভক্তি করে জীবনের প্রত্যেক পর্যায়ে যথার্থ কর্তব্য সম্পন্ন করে জীবনকে পূর্ণতাদানের
জন্য কঠোর সাধনায় ব্রতী হয়ে ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top