জৈন ধর্মকে কেন প্রতিবাদী ধর্ম বলা হয়? জৈন ধর্ম | Sem-1 Note PDF |

  

জৈন ধর্মকে কেন
প্রতিবাদী ধর্ম বলা হয়?

Or

 জৈন ধর্মের মূল শিক্ষার ওপর একটি টীকা লেখ।

 


জৈন ধর্মকে কেন প্রতিবাদী ধর্ম বলা হয়?

খ্রিঃ পৃঃ ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের যুগে যেসব ধর্মসম্প্রদায়
বিশিষ্টতা লাভ করেছিল, তার মধ্যে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম ছিল প্রধান। জৈন শাস্ত্র অনুযায়ী
মহাবীর সহ ২৪ জন  তীর্থঙ্কর বা ধর্মগুরু এই
ধর্মমত প্রচার করেন। মহাবীর ছিলেন সর্বশেষ তীর্থঙ্কর। তার পূর্ববর্তী ২৩ তম তীর্থঙ্কর
‘পার্শ্বানাথ’ জৈনধর্মের মূল নীতিগুলি নির্দিষ্ট করে যান। পার্শ্বানাথের চতুর্যাম বা
চারটি নীতি হল-(১), অহিংসা (২) মিথ্যা কথা না বলা (৩) চুরি না করা (৪) কোনো বস্তুর
প্রতি মায়ায় আবদ্ধ না হওয়া,  মহাবীর পার্শ্বানাথের
এই চতুর্যাম গ্রহণ করেন এবং তার সঙ্গে একটি নতুন নীতি যুক্ত করেন যথা-(৫) ব্রহ্মচার্য।

পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত ধর্মমতকে সংগ্ৰহবদ্ধ ও সংস্কার করে মহাবীর তাকে নতুন
করে জনপ্রিয়তা দেন। তিনি জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা না হলে ও কার্যত তিনি ছিলেন তার প্রবক্তা
ও প্রচারক। প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে পার্শ্বানাথের কথা জানা যায়।

 

জৈনধর্মের মূল
তত্ত্ব:

 জৈনধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা সে প্রশ্নকে
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিশ্বের সৃষ্টি ঈশ্বরের অনুগ্রহে হয় এমন কথা জৈনধর্মের
বলা হয়নি। জৈনশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই বিশ্বজগৎ, মানব জীবন,সবকিছুই একটি সর্বজনীন
নিয়মের অধীন। এই নিয়ম হলো – উন্থানের পর আসবে পতন এবং পতনের পর আসবে উথান। উন্নতির
পর্যায়ে শেষ হলে আসবে অবনতি, প্রতি পর্যায়ে তীর্থঙ্করের এসে মানুষকে প্রকৃত মুক্তি
পথের সন্ধান দেবেন।

ত্রিরত্ন:

উথান পতন, সুখ- দুঃখের পালা চক্রের মতন ঘুরছে। জৈনধর্মে কর্মফলের হাত থেকে
মুক্তির জন্য ‘ত্রিরত্ন’ অর্থাৎ- সৎবিশ্বাস;সৎজ্ঞান; সৎ আচারন পালন করার কথা বলা হয়েছে।
এই তিনটি নীতি বা ত্রিরত্ন পালন করলে মানুষ সিদ্ধশীল হবে। এরফলে কর্মফল ও জন্মান্তরবাদের  হাত থেকে মানুষের মুক্তি পথের অগ্রগতি ঘটবে।

 

অহিংসা ও সর্বপ্রাণবাদ:

জৈনধর্মের  জীব বা প্রাণের অস্তিত্ব
অত্যন্ত ব্যাপক ভাবে কল্পনা করা হয়।জীব বা প্রাণ কেবলমাত্র প্রাণিজগতে অবস্থান করে
না। গাছপালা পাহাড়-পর্বত নদ-নদী সবকিছুতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে জৈনরা মনে করেন।
‘সর্বপ্রাণবাদ’ জৈনধর্মের প্রধান অঙ্গ। এই জীবনের সংখ্যা অত্যন্ত এবং তারা সর্বত্র
সমান। জলকে যেমন বিভিন্ন পাত্রে রাখলে বিভিন্ন আকার নেয়, সেইরকমই বস্তুর প্রভেদের
জন্য প্রাণের প্রকাশভঙ্গি ও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

 

কর্মফল:

জীবনে পবিত্রস্বরূপ মানুষ তার  
কর্মফল দ্বারা জীবনকে অপবিত্র করে। এই জীবনে পরিশুদ্ধ করার জন্য কঠোর সাধনা,
উপবাস, তপস্যা ও অহিংসা পালন করার কথা মহাবীর বলেছেন। আসক্তি ত্যাগ করে সংযম এবং ত্যাগময়
জীবনযাপন করলে মানুষের শেষপর্যন্ত মুক্তি লাভ করবে। জৈন ধর্মের জৈনধর্মের মূললক্ষ্য
হল জীবনে কর্মফলের প্রভাবে যে অপবিত্রতা এসেছে তা থেকে মুক্তি থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
জৈনধর্মে আত্মীয়,-পরিজন, সম্পত্তি সবকিছুকে জীবন থেকে পৃথক করে দেখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য  সরল, অনাড়নম্বর  জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে। এতে সততা ও মৃতব্যায়িতাকে
বিশেষ মূল্য দেওয়া হয়।

 

এভাবে জৈনধর্ম তার বিভিন্ন নীতি আদের্শের মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিপথের নির্দেশ
দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জৈনধর্ম হল বিভিন্ন নীতি-নিয়ম সমষ্টি। এই নীতি নিয়ম পালনের
মাধ্যমে জীবন পবিত্র ও  শান্তিময় হয়ে ওঠে।
এর ফলে প্রার্থীব দুঃখ কষ্টের হাত থেকে পরিত্রাণ এবং আপার্থিব আধ্যান্ম জীবনে জীবাত্মার
উন্নয়ন ঘটে এবং মুক্তি পথ প্রশস্ত হয়। এইভাবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্রাহ্মণ্য
ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন রুপে জৈন ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top