রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচনাক্ষেত্রের পরিধি বিশ্লেষণ করো।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুর পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করো।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচনাক্ষেত্রের পরিধি:
রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল সামাজিক বিজ্ঞান।
এই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনাক্ষেত্রের পরিধি এক জায়গায়
দাঁড়িয়ে
থাকেনি, যুগ ও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা ক্ষেত্রের পরিধি
পরিবর্তিত হয়েছে। তাই, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনার পরিধিকে সতত পরিবর্তনশীল বলে আখ্যা
দেওয়া হয়।
সাবেকি অভিমত: রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেকি আলোচ্যসূচি
ও সীমানা বিন্যস্ত হয়েছিল। গার্নারের মতে, রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
সূচনা ও সমাপ্তি। রাষ্ট্রের উৎপত্তি, উপাদান, বিবর্তন, প্রকৃতি, রাষ্ট্রতত্ত্ব, রাষ্ট্রীয়
সংগঠন ও তার কার্যাবলি প্রভৃতির মধ্যেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বহুদিন ধরে নিজেকে সীমাবদ্ধ
রেখেছিল। রাষ্ট্রকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান বিষয় বলে মনে করা হত। পরবর্তীকালে সরকারের
কথাও বলা হয়। সরকারের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবে কার্যকর
করে থাকে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারকেও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত
করা হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমতঃ ম্যাকেঞ্জি তাঁর “The
Study of Political Science Today’ গ্রন্থে বলেছেন, রাষ্ট্র এবং তার সংশ্লিষ্ট সংগঠনের
কার্যাবলিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যে আলোচনা তা অত্যন্ত কৃত্রিম ও খামখেয়ালিপূর্ণ।
রাজনীতি শুধুমাত্র রাষ্ট্র এবং তার সংগঠনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না, সমাজের বিভিন্ন
স্তরের মধ্যেও তা লক্ষ করা যায়। ভোট-সম্পর্কিত আচরণ, বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ভূমিকা,
সামাজিক ব্যবহার, অভ্যাস ও প্রথা, সমাজের সাংস্কৃতিক ধরন, যোগাযোগ ও প্রভাব বিস্তারের
মাধ্যম, সমাজের অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও জনসংখ্যা-সম্পর্কিত বিভিন্ন অবস্থার বিচারবিশ্লেষণ
প্রভৃতিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।
মার্কসবাদী অভিমত: মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাষ্ট্র, সরকার,
আইন ইত্যাদি বিষয়কে সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলোচনা করলে সেই
আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অর্থনীতি-নিরপেক্ষ রাজনীতির আলোচনা বিজ্ঞানসম্মত নয়।
তাই কোনো দেশের শাসনব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করতে গেলে সেখানকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার খুঁটিনাটি
বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত) ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
প্যারিসে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মেলনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচ্য পরিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়—
সামগ্রিকভাবে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় যে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেগুলি হল—
(৫)
রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন;
(ii)
রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান—গঠন, কার্যাবলি, ভূমিকা;
(iii)
রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক;
(iv)
সরকারের বিভিন্ন রূপ;
(v)
ক্ষমতার স্বরূপ ও প্রয়োগ;
(vi)
সাংবিধানিক আইন;
(gii)
তুলনামূলক রাজনীতি;
(viii)
রাজনৈতিক দল, স্বার্থগোষ্ঠী;
(iv)
জনমত ও নির্বাচনি আচরণ;
(v)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আইন ও সংগঠন ইত্যাদি।
উপসংহারঃ অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন—“সংগঠিত
রাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে মানবজীবনের আলোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান। আমরা আলোচ্য বিষয় থেকে
মানবজীবনকে প্রভাবিত করে এমন কোনো কিছুই বাদ দিতে পারি না। যে সমাজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান
তার রসদ সংগ্রহ করে, তা অত্যন্ত গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাক্ষেত্রের
পরিধি অপরিবর্তিত থাকা সম্ভব নয়।