হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার আলোচনা করো। B.A History Note Semeste- I,
হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস চর্চাই হরপ্পা সংস্কৃতির
আবিষ্কার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, 1922 খ্রিস্টাব্দে বাঙালি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতান্ত্রিক
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় সিন্ধু নদের তীরে মহেঞ্জোদারো
নামক স্থানে একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসস্তূপ খনন করতে গিয়ে অতি প্রাচীন তাম্রাশ্নীয়
যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার নির্দেশন আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। প্রায় একই সময়ে
মহেঞ্জোদারো থেকে 640 কিমি দূরে পাঞ্জাবের মন্টগোমারি জেলায় ইরাবতী নদীর পৃর্বকূলে
হরপ্পা নামক এক জায়গায় পন্ডিত দয়ারাম সাহানী একই প্রকার সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার
করেন।
পরবর্তীকালে
ভারতীয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন অধিকর্তা স্যার মার্শাল এ ব্যাপারে যথেষ্ট
উদ্যোগী হয়ে উভয় স্থানে ব্যাপক খননকার্য পরিচালনা করেন। এর ফলে উভয় স্থানে প্রাচীন
নগরের ধ্বংস্তূপ ও প্রচুর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার সুপ্রাচীন ভারতীয়
সভ্যতা নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। ফলে ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব ও মৌলিকত্ব সুমেরীয়
ও মিশরীয় সভ্যতার সমকালীন বলে প্রমাণিত হয়।
মার্টিমার হুইলার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে আরব সাগরের
তীরে থেকে এক হাজার মাইল ব্যাবধানের মধ্যে
অন্তত 37 টি জায়গায় হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন প্রাপ্তির কথা বলেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিকবিদ
গর্ডন চাইল্ড 1954 খ্রিস্টাব্দে এই সভ্যতার
বিশাল বিস্তৃতির কথা ঘোষণা করেছিলেন। যদিও 1930 খ্রিস্টাব্দে স্যার জন মার্শালা এই
সভ্যতার বিস্তৃতি পরিধি কথা বলেছিলেন। পরবর্তীকালে ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা,
উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট প্রভৃতি অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে প্রায় 2 শতাধিক প্রত্নক্ষেত্রের
নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
বালুচিস্তানের মাকরান উপকূলে আরব সাগরের তীরে
অবস্থিত সুতকাজেনদোর প্রত্নকেন্দ্রটি হরপ্পা সংস্কৃতির সাক্ষ্য দেয়। এছাড়াও সিন্ধু
প্রদেশের চানহৃদার, কোটদিজি ও আলিমুরাদ হরপ্পা সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নক্ষেত হিসেবে
সুবিদিত। রাজস্থানের কালিবঙ্গান; গুজরাটে লোথাল; ধোলাবিরা, দেশলপার, হিমালয়ের পাদদেশ, সমভূমি সংযোগস্থলে অবস্থিত রুপার
উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার হিন্ডন নদীর তীরে অবস্থিত আলমগীরপুর, হরিয়ানার বানাওয়ালী, মিটাটল
প্রভৃতি।
1947 সালে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের যৌথ উদ্যোগে
আরও বিভিন্ন স্থানে খননকার্য চালিয়ে হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। এইচ. ডি.শা়ংখ্যালিয়া
বলেছেন যে এই সভ্যতা প্রায় 1600 কিমি পরিধি
নিয়ে বিস্তৃত ছিল। অনেকে মনে করেন যে, পূর্ব-পশ্চিমে 1100 কিমি এবং উত্তর-দক্ষিণ 1600 কিমি পরিধি নিয়ে হরপ্পা সভ্যতা বিস্তৃত।
সুতরাং, হরপ্পা সভ্যতার আয়তন ছিল বিশাল। হরপ্পা
সভ্যতার পূর্ব দিকে গঙ্গা যমুনা দোয়াবের পশ্চিম ভাগে আলমগীরপুর থেকে পশ্চিমে পাকিস্তানের
অন্তর্গত বালুচিস্তানের মাকরান উপকূলে অবস্থিত সুতকাজেনদোর ও সোতকাকোহ
পর্যন্ত এবং উত্তরের আফগানিস্তানের শোরতুভান
থেকে দক্ষিনে মহারাষ্ট্রের পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিবাদের বিচারে এই সুবিস্তৃত
এলাকার আয়তন ছিল প্রায় ৭ লক্ষ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ছিল 10 লক্ষের কাছাকাছি। সুতরাং
হরপ্পা সভ্যতার আয়তনের বিশালতা সম্পর্কে উপরিউক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওয়াকি বহাল
হওয়া সম্ভব হয়।
- পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের উল্লেখিত ভারতের পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনের পরিচয় দাও
- পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক অবস্থা ঋক বৈদিক যুগের তুলনায় কী কি ভাবে পৃথক ছিল?
- মেহেরগড় উৎখননের গুরুত্ব আলোচনা করো।
- দেবদেবীর সম্পর্কে পরিবর্তনশীল চেতনার আলোকে বৈদিক ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা করো।
- ঋক বৈদিক যুগের ধর্মীয় অবস্থা ও দেবদেবী সম্পর্কে তোমার ধারণা লেখ।
- রেডিও কার্বন 14 পদ্ধতি।