প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর | History Note In Bengali | ClassGhar |

প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর | Discuss the characteristics of the Paleolithic Age.

প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট

ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল বহু  সহস্র বছর পূর্বে। সাধারণত এ সময়ে কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। কেবল মাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে এই যুগের ইতিহাস রচিত হয়, তাই এই যুগকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের আয়তন, গঠন ও তাদের ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করে বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদ এই যুগ কে প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগ এই তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন।

মানব সংস্কৃতির সবচেয়ে আদিমতম পর্ব প্রাচীন প্রস্তর যুগ। ভারতবর্ষে এই যুগের সূচনাহয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 4 লক্ষ অব্দ থেকে এবং সমাপ্তি ঘটে আনুমানিক 8000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তবে হাতিয়ারের বৈচিত্র ও সময়কালে তারতম্য অনুসারে এই যুগকে প্রাচীন, মধ্য ও নিম্ন এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় । সাধারণত পুরা প্রস্তর যুগে প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে পাঞ্জাবের সোয়ান নদীর উপত্যকায় অবস্থিত সোয়ান সংস্কৃতি এবং দক্ষিণ ভারতে মাদ্রাজ অঞ্চলে মাদ্রাজ সংস্কৃতি। এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলির মধ্যে হাতকুঠার  ও  কোপানি উল্লেখযোগ্য ।

এ যুগে মানুষ প্রাকৃতি থেকে যে আকারের পাথর পেত কোন আকারগত পরিবর্তন না করেই সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এই জাতীয় হাতিয়ারকে পুরাতত্ত্বের ভাষায় “CORETOOL” বলা হত। হাতিয়ারগুলি ছিল আয়তনে বড়ো এবং তাতে কোনো সৌন্দর্য বা মসৃণতা ছিলনা । পাথরের হাতিয়ার গুলির সম্ভবত হোমো হ্যাবিলিস বা হোমো ইরেকটাস প্রজাতির মানব গোষ্ঠী দ্বারা তৈরি হয়েছিল বলে পুরাবিদরা মনে করেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথর ভেঙে ধারালো ও তীক্ষ্ন করার চেষ্টা করত বলেও মনে করা হয়। হাতিয়ারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হাতকুঠার ও  কোপানি।একই হাতিয়ার দিয়ে মাংস কাটা, কাঠ কাটা, শিকার করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ করত। কাশ্মীরের কহেল গাঁও কোপানি এবং হাতকুঠারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

হাতিয়ার নির্মাণের কৌশল ছিল পরিবর্তনশীল। যদিও সেই পরিবর্তনের গতি ছিল অতি মন্থর। মূল পাথরের গায়ে আঘাত করে প্রস্তর খন্ডের কোনাচের অংশগুলি বার করে নেওয়া হত, যা পুরাতত্ত্বের ভাষায় “FLAKE” বলা হত। এই পর্বে প্রধান অস্র হল ছুরি, বল্লম, হারপুন, ছুঁচ প্রভূতি। সাধারণত মহারাষ্টের নেভাশাতে, রাজস্থানে দিদওয়ানে ও ভীমভেটকা গুহায় এই জাতীয় হাতিয়ার পাওয়া যায়। দিদওয়ানে “FLAKE” হাতিয়ারগুলি থার্মলুমিনিসেন্স পরীক্ষা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় 57 হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল।     

 বস্তুত, প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজ ও আগুনের ব্যবহার জানত না। এমনকি তাদের কোনো স্থায়ী বাসস্থান ছিল না। ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে তারা যাযাবর জীবনযাপন করত। পরবর্তীতে আত্মরক্ষার তাগিদে মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসাবস করত। পশু শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করাই ছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। এছাড়া বনের ফলমূল, লতাগুল্ম ও পাখির ডিম খেয়ে জীবন ধারন করত। আনুমানিক 8000 খ্রিঃপূঃ এই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। ধীরে ধীরে ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাচীন প্রস্তর জুগ থেকে মধ্য প্রস্তর যুগে উত্তরণ ঘটে।।

নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলতে কী বোঝো |

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top