কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য বা প্রভাব বা ফলাফল আলোচনা কর | Kalinga War | ClassGhar |



কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য বা প্রভাব বা ফলাফল

        কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রভাব ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারি। অশোক তথা
মগধের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে কলিঙ্গ যুদ্ধ এক নব যুগের সূচনা করেছিল। যা
পরবর্তীতে অশোকের ব্যক্তিগত জীবন ও মৌর্য সাম্রাজ্যের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার
করেছিল। অশোক তাঁর ত্রয়োদশ শিলালিপিতে এই
যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। ডঃ হেমচন্দ্র রায় চৌধুরীর
মতে,-
“The Conquest of Kalinga was a great Landmark in the
history Magadha and of India”  “মগধ তথা ভারত ইতিহাসে কলিঙ্গ যুদ্ধ এক যুগান্তকারী ঘটনা”। তাঁর মতে, বিম্বিসার
 অঙ্গরাজ্য বিজয় দ্বারা মগধে যে বিস্তার
নীতি সূচনা করেছিলেন, কলিঙ্গ  যুদ্ধের
দ্বারা সেই সাম্রাজ্যবাদী নীতির পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এর পরিবর্তে মগধের ইতিহাসে
সাম্য, মৈত্রী,‌ সামাজিক প্রগতি ও ধর্ম প্রচার এর এক নতুন যুগের সূচনা হয়।
         ডঃ রাধকুমুদ মুখোপাধ্যায় মতে,–
কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলে অশোকের ব্যক্তিজীবন এবং মগধের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির
ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন দেখা দেয়। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে তিনি চিরদিনের মতো
যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেন এবং সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করতে
থাকেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিত্যাগ করে ধর্ম বিজয়ের নীতি
গ্রহণ করেন। তাছাড়া অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ফলে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে অশোক
মানসিক শান্তি লাভের জন্য গৌতম বুদ্ধের প্রেম, মৈত্রী ও অহিংসার আদর্শ গ্রহণ করেন।
যুদ্ধের দ্বারা পররাজ্য গ্রাস না করে প্রেমের দ্বারা অন্যের হৃদয় জয় করা যায়
তার লক্ষ্যে পরিণত হয়। তিনি “ভেরীঘোষ” কে “ধর্মঘোষ”-এ পরিণত করেন।
          অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অশোক রাজ কর্তব্যের
এক নতুন আদর্শ স্থাপন করেন। তিনি কলিঙ্গ লিপিতে ঘোষণা করেন যে,-“ সবে মুনিষে পজা মমা”
অর্থাৎ সকল প্রজা আমার সন্তান। তিনি তাঁর ত্রয়োদশ শিলালিপিতে ঘোষণা করেন যে,- আমার
একমাত্র উদ্দেশ্য হল প্রজাদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ সাধনে করা। তিনি আরও বলেন
যে, রাজপথ গ্রহণ করে প্রজাদের কাছে তিনি ঋণগ্রস্থ, প্রজাদের কল্যানের জন্য কাজ করে
সেই ঋণ পরিশোধ করতে চান।


         বস্তুত অশোক প্রজাবর্গের মঙ্গল সাধনের জন্য রাজুক,
যুত, প্রাদেশিক, মহামাত্র, ধর্মমহামাত্র প্রভৃতি রাজ কর্মচারী নিয়োগ করেন। কলিঙ্গ
যুদ্ধের পর অশোক বাণিজ্যিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। এই যুদ্ধ জয়ের ফলে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার জলপথ ও স্থলপথ গুলির উপর মগধের নিয়ন্ত্রণ
স্থাপিত হয়। তিনি সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বৃক্ষরোপণ,কূপখনন, মানুষ ও পশুর
জন্য চিকিৎসালয় স্থাপন, অতিথিশালা নির্মাণ, জীব হত্যা নিষিদ্ধকরণ করেন। তাছাড়া
অহিংসা আদর্শ তথা বৌদ্ধ ধর্মকে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি আহ্বানের মাধ্যমে বিদেশে
সম্প্রসারণের জন্য রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করেন।
         কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা
অশোকের মনোভাবের আমূল পরিবর্তন ঘটায়। অহিংস ধর্মীয় নীতি গ্রহণের মাধ্যমে মৌর্য
সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। অধপর শান্তি, সামাজিক প্রগতি ও
ধর্ম বিজয়ের পর্ব শুরু হয় যা অশোক কে বিশ্বজনীন ও সমগ্র পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ
সম্রাটের সিংহাসনে অভিষিক্ত করেছেন। তাঁর মতো প্রতিভাবান সম্রাট শুধু ভারতের
ইতিহাসে নয়, বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top