কলিঙ্গ যুদ্ধের কারন
বিন্দুসার এর মৃত্যুর পর তার পুত্র অশোক 273 খ্রিস্টপূর্বাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন। তিনি কেবল মাত্র মৌর্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট নন, তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের সর্বকালের ও সর্বদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নরপতি। তার রাজত্বকালে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো কলিঙ্গ রাজ্য জয়। সম্রাট অশোকের রাজ্য ভিষেকের নববর্ষের (মতান্তরে অষ্টম বর্ষে) 260-261 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাংলা সুবর্ণরেখা নদী থেকে গোদাবরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে অবস্থিত বর্তমান উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত কলিঙ্গ জয় করেন।
অশোকের ত্রয়োদশ প্রধান শিলালিপিতে অশোক কর্তৃক কলিঙ্গ রাজ্য জয়ের কারণ বিস্তৃতভাবে উল্লেখিত আছে।
প্রথমতঃ– নন্দ বংশের আমলে কলিঙ্গ মগধের অধীনে ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যর আমলে তা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিন্দুসার দক্ষিণাঞ্চলের চোলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলে কলিঙ্গ রাজ্য চোল ও পান্ড্য রাজাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক শক্তি জোট গঠন করে। এর ফলে বিন্দুসার পরাজিত হয়ে ফিরে যান।এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে অশোক কলিঙ্গ রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা
করেন।
করেন।
দ্বিতীয়তঃ– কলিঙ্গ রাজ্য দিনদিন সামরিক বলে প্রবল ভাবে বলিয়ান হয়ে উঠেছিল । প্লিনি-র মতে কলিঙ্গের পদাতিক বাহিনীর সংখ্যা ছিল 60 হাজার, অশ্বারোহী 1 হাজার এবং রণহস্তী 700 । পরবর্তীকালে এর শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়। নিজ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে অশোকের পক্ষে কলিঙ্গের মতো শক্তিশালী রাজ্যের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এজন্য তিনি কলিঙ্গ আক্রমণের উদ্যোগী হয়ে ওঠে।
তৃতীয়তঃ– ডঃ রোমিলা থাপার বলেন যে,- কলিঙ্গ রাজ্য দাক্ষিণাত্যের যাওয়া জলপথ ও স্থলপথ গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত। মগধের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের যোগাযোগের পথে কলিঙ্গ ছিল প্রধান বাধা। সুতরাং নিজ বাণিজ্যিক স্বার্থের তাগিদে মগদের পক্ষে কলিঙ্গ জয় অপরিহার্য ছিল।
চতুর্থতঃ- সে সময়ে মগধের সামুদ্রিক বানিজ্য তাম্রলিপ্ত হয়ে ব্রহ্মদেশ, সুমাত্রা, জাভা প্রভূতি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। কলিঙ্গ ছিল এই বাণিজ্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।
এইসব নানা কারণে নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীন কলিঙ্গ রাজ্যের উপস্থিতি মগদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।এজন্য অশোক
260 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে কলিঙ্গ আক্রমণ করে অধিকার করে নেয়। ত্রয়োদশ শিলালিপিতে অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির
বিবরণ দিয়েছেন। অতঃপর শান্তি, সামাজিক প্রগতি ও ধর্ম বিজয়ের পর্ব শুরু হয়। যা অশোককে বিশ্বজনীন ও সমগ্র পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ সম্রাটের সিংহাসন অভিষিক্ত করেছেন।
260 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে কলিঙ্গ আক্রমণ করে অধিকার করে নেয়। ত্রয়োদশ শিলালিপিতে অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির
বিবরণ দিয়েছেন। অতঃপর শান্তি, সামাজিক প্রগতি ও ধর্ম বিজয়ের পর্ব শুরু হয়। যা অশোককে বিশ্বজনীন ও সমগ্র পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ সম্রাটের সিংহাসন অভিষিক্ত করেছেন।