নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলতে কী বোঝো | Neolithic Age

নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব (Neolithic Age)
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে যে প্রস্তর যুগেকে নির্দেশ করা হয় তার মধ্যে প্রাচীনতম দুই যুগ অর্থাৎ প্রাচীন প্রস্তর ও মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল যাযাবর ও খাদ্য সংগ্রহকারী। তৎকালীন সময়ে হাতিয়ার ছিল অমসৃণ ও বড়ো পাথরের তৈরি। কিন্তু 7000 খ্রিঃপূঃ ও তৎপরবর্তী পর্বে অর্থাৎ নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। প্রকৃতপক্ষে নব্য প্রস্তর অর্থাৎ Neolithic শব্দটির অর্থ হলো Neo অর্থ নতুন এবং Lithic অর্থ পাথর, সেহেতু Neolithic বলতে নতুন পাথরের যুগকে বোঝায়। এই যুগে মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। এ যুগের হাতিয়ার গুলিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। হাতিয়ার গুলি ছিল যথেষ্ট তীক্ষ্ণ, মসৃণ ও উন্নত এমনকি হাড়ের তৈরি হাতিয়ারও ব্যবহৃত হতো।
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজ ও পশু পালন করতে শুরু করে। তারা যাযাবর জীবন ছেড়ে এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফসল কাটার জন্য এ সময়ে তৈরি হয় কাস্তে। এছাড়া কুলো, হামানদিস্ত, শিলনোড়া, যাতা, হাতুড়ি, বাটালি, নেহাই প্রভৃতি যন্ত্রপাতির উদ্ভব হয়। এসময় হাতকুঠারের এর সামনের দিকটা অনেক বেশি তীক্ষ্ন এবং হাতল যুক্ত হয়। নিজেদের উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখার জন্য শস্যাগার গড়ে উঠেছিল। এই পর্বে মানুষ আগুনের নানাবিধ ব্যবহার, চাকার ব্যবহার, ধাতুর ব্যবহার, মৃৎশিল্প, বয়ন শিল্প, গৃহ নির্মাণ কৌশল, যানবাহন তৈরি, নৌকার পাল খাটানো, পাথর দিয়ে অলংকার এবং পাথর সাজিয়ে “ডোলমেন” নামের সমাধি নির্মাণ প্রভৃতি করতে শেখে।
সুতরাং প্রাচীন ও মধ্য প্রস্তর যুগের তুলনায় নব্য প্রস্তর যুগে এসে এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের জীবনে এই ব্যাপক তথা বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে পুরাতাত্ত্বিক গর্ডন চাইল্ড “নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব” বলে অভিহিত করেছেন। গর্ডন চাইল্ড 1936 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “Man Makes Himself” গ্রন্থে এবং 1940 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “What Happened in History” গ্রন্থের নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব তত্ত্বটি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রসঙ্গত ভারতীয় উপমহাদেশে 7000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 3200 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলে অভিহিত করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে নব্যপ্রস্তর যুগের যেসমস্ত প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল পাকিস্তানে অন্তর্গত বালুচিস্তানের বোলান গিরিপথের কাছে কোয়াটা থেকে 150 কিমি দূরে অবস্থিত মেহেরগড়। এছাড়া নব্যপ্রস্তর যুগের অন্যন্য প্রত্নক্ষেত্রগুলি হল কিলে-গুল-মহম্মাদ, কাশ্মীরের বুর্জাহোম, কোলদিহাওয়া, বিহারের চিরান্দ, পান্ডু রাজার ঢিপি প্রভূতি।
পরিশেষে বলা যায় যে,মধ্যপ্রস্তর যুগে 4 ভাগে 1 ভাগ সময়কালের মধেই নব্যপ্রস্ত্র যুগের মানুষের বস্তুগত জীবনের যে ব্যপক ও বৈপ্লবিক পরির্তন ঘটেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে একে নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়।