হবস্, লক এবং রুশোর তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা করো | একাদশ শ্রেনি | Political 2nd Chapter | PDF |

  


হবস্, লক এবং রুশোর তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা:

সাদৃশ্য:

সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রধান তিন প্রবক্তা হলেন
ইংরেজ দার্শনিক হব, লক এবং ফরাসি দার্শনিক রুশো। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে
রাষ্ট্রের সৃষ্টির কথা তাঁরা তিনজনই তাঁদের তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।
হবস, লক এবং রুশোর তত্ত্বে এ কথা স্বীকার করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের উদ্ভব হওয়ার
আগে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। ‘প্রাকৃতিক অবস্থায় বসবাস করার সময় মানুষ
যেসব বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিল তা দূর করার জন্য এবং জীবন, স্বাধীনতা ও
সম্পত্তির নিরাপত্তার লক্ষ্যে তারা রাষ্ট্র গঠনের জন্য উদ্যোগী হয়।

বৈসাদৃশ্য:

 হব, লক
এবং রুশোর তত্ত্বের মধ্যে সাদৃশ্য বা মতৈক্যের পাশাপাশি বহু বিষয়ে বৈসাদৃশ্য বা মতানৈক্য
দেখা যায়।

1. উদ্দেশ্য : হস্ নিজে
ইংল্যান্ডের স্বৈরাচারী স্টুয়ার্ট রাজপরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এজন্য তিনি সামাজিক
চুক্তি মতবাদে রাজার হাতে চরম ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন। এমনকি স্বৈরাচারী হলেও
রাজার বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহ ঘোষণা করা যাবে না বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ দার্শনিক লকের মতবাদে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন
লক্ষ করা যায়। ফরাসি দার্শনিক রুশো তাঁর মতবাদে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে সাম্য, মৈত্রী
ও স্বাধীনতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে
চেয়েছিলেন।
            

2. সার্বভৌমত্বের অবস্থান:
হসের তত্ত্বে রাজাকে চরম ক্ষমতার অধিকারীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। হস্ ব্যক্তিসংসদের
হাতে চরম ক্ষমতা তুলে দিয়ে আইনগত সার্বভৌমিকতার কথা বলেছেন। লকের তত্ত্বে এ কথা
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কর্তব্যচ্যুত রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার পূর্ণ অধিকার
জনগণের রয়েছে। এভাবে লক তাঁর তত্ত্বে রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার ধারণার জন্ম দেন।
অন্যদিকে, ফরাসি দার্শনিক রুশো সাধারণ ইচ্ছা’কে চূড়ান্ত, অভ্রান্ত, অবিভাজ্য ও
অহস্তান্তরযোগ্য বলে অভিহিত করেন। এইভাবে রুশো জনগণের সার্বভৌমিকতার কথা তুলে
ধরেন।

3. আইন: হবসের বক্তব্য হল
রাজার নির্দেশই হল আইন। তাঁর মতে, আইন চরম ও অভ্রান্ত। এই কারণে আইনের বিরোধিতা
করা উচিত নয়। লকের অভিমত হল, আইনের মাধ্যমে জনগণের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতা
রক্ষা রাজার কর্তব্য। রাজা শুধুমাত্র এই কর্তব্যপালনের বিনিময়ে প্রজাদের আনুগত্য
লাভ করে থাকেন। রুশোর মতে, আইন হল সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রকাশ। তাঁর মতে, আইনের
বিরোধিতা করা ঠিক নয়। কারণ, আইনের বিরোধিতার অর্থ হল নিজেদের সমষ্টিগত ইচ্ছার
বিরোধিতা করা।

4. চুক্তির স্বরূপঃ হবসের বক্তব্য
অনুসারে, আদিম মানুষ নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করে যাবতীয় ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি
বা ব্যক্তিসংসদের হাতে তুলে দিয়েছিল। রাজা নিজে চুক্তির উর্ধ্বে ছিলেন। তিনি
চুক্তির কোনো পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে, লকের মতে চুক্তি হয়েছিল দুটি। প্রথমে জনগণ
নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে এবং পরে দ্বিতীয়
চুক্তিটির মাধ্যমে জনগণ তাদের সমস্ত ক্ষমতা রাজার হাতে তুলে দেয়। রুশোর মতে আদিম
মানুষ চুক্তির সাহায্যে রাষ্ট্র তৈরি করেছিল ঠিকই, কিন্তু এই চুক্তি হয়েছিল
জনগণের নিজেদের মধ্যে। রুশোর বক্তব্য হল চুক্তির মাধ্যমে জনগণ তাদের সমস্ত ক্ষমতা
সাধারণ ইচ্ছা’র হাতে তুলে দিয়েছিল।

5. চুক্তির আবশ্যিকতা: হসের বক্তব্য ছিল,
আদিম মানুষ তাদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চুক্তির মাধ্যমে
রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল। লকের মতে, প্রাকৃতিক অবস্থায় আদিম মানুষের জীবন ছিল
অসম্পূর্ণ। এই অবস্থায় আদিম মানুষ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করল। রুশোর
মতে, প্রাকৃতিক অবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত ধনসম্পত্তির আবির্ভাবের
ফলে যে সমস্ত জটিলতা দেখা দেয় তার ফলে আদিম মানুষের জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট
হয়ে যায়, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সংঘাত ও যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দেয়। এই অসহনীয় অবস্থা
থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ চুক্তির। মাধ্যমে সার্বভৌম শক্তির প্রতিষ্ঠা করে।

6. সামাজিক
পরিস্থিতি:
হবসের বক্তব্য হল রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ
প্রাক্-সামাজিক পরিবেশে বসবাস করত। অর্থাৎ
, তখনও পর্যন্ত সমাজের আবির্ভাব ঘটেনি। লকের
মতে
, প্রাকৃতিক অবস্থায় রাষ্ট্র সৃষ্টি না হলেও সমাজ সৃষ্টি
হয়েছিল। তবে আদিম মানুষের সমাজে তখনও কোনো রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটেনি। রুশওর
অভিমত হল
, প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রথম পর্বে মানুষ সম্পূর্ণ
স্বাধীন ছিল। তাঁর মতে
, এই প্রাক্-সামাজিক পরিবেশে আদিম
মানুষের সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।

7. প্রাকৃতিক অবস্থায়
মানবজীবন :
হবসের মতে প্রকৃতির রাজত্বে কোনোপ্রকার বলবৎযোগ্য আইনকানুন থাকার ফলে মানুষ
এক অনিয়ন্ত্রিত ও স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন করত। অন্যদিকে লকের বক্তব্য হল
, প্রাকৃতিক
অবস্থায় সমাজজীবনের অস্তিত্ব থাকায় মানুষের জীবনযাত্রা প্রকৃতির নিয়মকানুনের
মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হত। রুশোর মতে
, প্রকৃতির রাজত্বে
মানবসমাজে কলহ
, বিবাদ, হিংসা, দ্বেষ ইত্যাদি দেখা যায়নি।

 

 Download Pdf

More Notes:- English

                 Education

               Bengali

               History

               Philoshopy

               Geography

               More Subject

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top