সমসাময়িক
ভারতীয় দর্শন
রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদের ধারণায় বিভিন্ন উৎসগুলি আলোচনা করো।
•
রবীন্দ্র
দর্শন চিন্তায় মানবতাবাদ:
রবীন্দ্র দর্শন চিন্তায়
মানবতাবাদ হল মানব জীবনের পরম আদর্শ। এই মানবতাবাদ এমন একটি বিশেষ দর্শন যার একমাত্র
কেন্দ্রবিন্দু হল মানুষ। কারণ মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বার মধ্যে যে দয়া, মায়া, প্রেম
প্রীতি ও ভালোবাসা প্রভৃতি যে মানবচিত্ত গুণ থাকে তাকেই মনুষ্যত্ব বা মানবতা বলে। আর
মানবতা সম্পর্কিত যে মতবাদ তাইই মানবতাবাদ।
মানবতা সম্পর্কে
রবীন্দ্রনাথের মূল বক্তব্য হল-“আমাদের অন্তরে এমন একজন আছেন, যিনি মানব অথচ যিনি
ব্যক্তিগত মানবকে অতিক্রম করে সর্বকালের এক সর্বজনীন মানব।যাঁর আকর্ষণে মানুষের চিন্তায়,
ভাবে ও কর্মে সর্বজনীনতার আবির্ভাব। তাঁকে ভালোবেসে জীবন দিতে পারেন”। তাই রবীন্দ্রনাথ
মনে করেন মানবতার এই উপলব্ধির মাধ্যমে মানুষ তার সংকীর্ণ গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব মৈত্রীর
প্রাঙ্গণে পৌঁছে যায়।
• মানবতাবাদের উৎস:
রবীন্দ্রনাথ
মানুষের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে মানবতার দুটি উৎস অনুসন্ধান করেছেন। একটি জীবভাব ও অন্যটি
হল বিশ্বভাব। যে উৎস দুটি বিষয়ে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
• জীব ভাব :
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন
জীবভাব গঠিত হয় মানুষের দেহ ও ইন্দ্রিয়কে নিয়ে তাই এই জীবভাবে মানুষের লক্ষ্য থাকে
জাগতিক সুখ, সম্পদ ও অর্থ উপার্জন। এই সত্ত্বাগুলিকে জীবের অহংসত্ত্বা বলা হয়। যার
আর এক নাম- “ছোটো আমি”। মানুষ এই অহংসত্ত্বার পরিচয় দেয় শুধুমাত্র তার
রূপ, দেহ ও সম্পদ দিয়ে। এই অহংসত্ত্বা মানুষের বাহ্যিক পরিচয় দেয়, যে পরিচয় এক
মানুষকে অন্য মানুষ থেকে পৃথক করে তাকে সংকীর্ণ করে তোলে। এই জীবভাবে মানুষের একান্ত
স্বার্থ জড়িত থাকে বলে জীব ভাবকে জীবসত্ত্বা ও বলা হয়।
সুতরাং, উক্ত আলোচনার
ভিত্তিতে বলা যায় জীবভাব মানুষকে যেন বিচ্ছিন্ন ও সংকীর্ণ করে স্বার্থপর করে তোলে।
এমনকি ধনী, দরিদ্রের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করে মানুষকে অহংকারী করে তোলে এবং পরিশেষে মানবধর্ম
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবতার পতন ঘটায়।
• বিশ্বভাব বা মানব
ভাব:
রবীন্দ্রনাথ
বলেছেন মানুষের মধ্যে বিশ্বভাবের সত্ত্বা গড়ে ওঠে
একমাত্র তার আদর্শ ও চিত্তবোধের ওপর। এগুলো হলো মানুষের আন্তরিক আহ্বান যা সংকীর্ণ
স্বার্থসিদ্ধি উপেক্ষা করে মানুষকে সত্যের অভিমুখে নিয়ে যায়। এমনকি এই বিশ্ব ভাব
বা মনোভাব মানুষকে আত্মত্যাগের দিকে এগিয়ে দেয় এবং মানুষের মধ্যে পূর্ণতাবোধ জাগিয়ে
তোলে। এই বিশ্বভাব দীর্ঘস্থায়ী।এর জন্ম বা মৃত্যু কিছুই নেই। এটি শাশ্বত যা মানুষের
সর্বোচ্চ আদর্শ। সেইজন্য রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক
যোগাযোগের মূলমন্ত্র রূপে গেয়ে উঠেছিলেন-
“আপন
হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া
বুকের
মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া”।
• জীবভাব ও মানবভাবের
যোগসূত্র:
রবীন্দ্রনাথ
বলেছেন, জীবভাব ও মানবভাব দুটি পরস্পরবিরোধী আদর্শ।প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এই দুটি
আদর্শ থাকলেও দুটিকে একসঙ্গে পালন করা সম্ভব নয়। দেখা যায় মানুষ জীবভাব নিয়ে জন্মায়।
জীব ভাবকে মানুষ তার জীবনে একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। আর তার ফলে মানুষের জীবন
সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ যদি নিজের চেষ্টায় নিজের মধ্যে মানবভাব জাগিয়ে তুলতে
পারে, অন্যের উপকারে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে, তাহলে মানুষের মাঝে নিজেকে অমর করে তুলতে
পারে। সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন জীবভাব ক্ষণস্থায়ী কিন্তু মানবভাব দীর্ঘস্থায়ী।
তাই মানুষের একমাত্র উচিত মানবভাবের আদর্শ গ্রহণ করা।
- অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন
- ন্যায় দর্শন প্রশ্ন-উত্তর
- ন্যায় মতে অনুমান কি? অনুমান কয় প্রকার ও কি কি? পরার্থানুমান বা পঞ্চাবয়বী ন্যায় এর প্রতিটি অবয়বের প্রয়োজন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
- চার্বাক দর্শন গুরুপ্তপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
- দর্শনের ধারণা গুরুপ্তপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
- বৌদ্ধ দর্শন গুরুপ্তপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
- ন্যায় মতে ব্যপ্তি কী? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন স্তর বা উপায় বা গ্রহ গুলো কি কি?