তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো |



তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা


ভূমিকা: নামকরণ শুধু
পরিচয়জ্ঞাপক শব্দরাজি নয়, তা সমগ্র সাহিত্য কর্মটির অন্তর্নিহিত অভিব্যক্তির সুষম
বাণীর প্রকাশ। নামকরণ কখনো বিষয়ানুসারী, কখনো চরিত্র কেন্দ্রিক আবার কখনো বা ব্যঞ্জনা
ধর্মী হয়ে থাকে। “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের নামকরণটি তার অন্তর্নিহিত
ব্যঞ্জনার বাণী মূর্তি।

 

কাহিনী সংক্ষেপ:
সুদূর প্রত্যন্ত গ্রাম

    তেলেনাপোতায় বেড়াতে আসে মনিদা সহ তিন শহরে
যুবক। রোমাঞ্চকর পরিবেশে রোমান্স রসের স্বাদ পায়। ঘটনাক্রমে পরদিন মণিদার জ্ঞাতিস্থানীয়া
যামিনীদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারতে যায়। যামিনী এবং তার অন্ধ অশক্ত মায়ের জীবনের
করুন কাহিনী শোনে। এই ঘটনায় নায়ক অর্থাৎ মৎস্যবিলাসী যুবক আবেবিহ্বল হয়ে এক বিশেষ
মুহূর্তে যামিনীর মায়ের বিশ্বাসমতো নিজেকে নিরঞ্জণ বলে পরিচয় দেয়। যামিনীকে বিয়ে
করার এবং আর না পালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। একদিন তিনবন্ধু ফিরে আসে শহরে। ম্যালেরিয়ায়
আক্রান্ত হয়ে নায়ক শয্যাশায়ী হয়। বাস্তবতার আঘাতে তার মন থেকে মুছে যায় তেলেনাপোতার
রোমান্টিক স্মৃতি।


বিশ্লেষণ: এই বিষয়বস্তুকে
গুরুত্ব দিলে দেখা যায় এই গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামের কথা এবং তা আবিষ্কারের কথাই মুখ্য
হয়ে উঠেছে। মড়কগ্রস্ত তেলেনাপোতার নির্জন নিস্তব্ধতা, বিপদসংকুল পথ, প্রত্যন্ত গ্রাম্য
 পরিবেশ, চরম দারিদ্র্য লাঞ্ছিত দু-একটি জীবনকে
যেন নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছে। অর্থাৎ নগরজীবনের সমান্তরালে যে দারিদ্র্যপীড়িত
উপেক্ষিত গ্রাম জীবনটি আজও বেঁচে আছে- সেই সত্যটি আবিষ্কারের ঘটনাই গল্পটির নামকরণকে
তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে বলে আপাত অর্থে মনে হয়।


         কিন্তু তেলেনাপোতা
নামে বাস্তবে কোনো গ্রাম নেই, আসলে গ্রামবাংলার দারিদ্র লাঞ্চিত, অবহেলিত সব গ্রামই
তেলেনাপোতা। তার মানুষগুলির শহর বিচ্ছিন্ন, সুখ- বিলাস- বৈভব বিবিক্ত চিরন্তন অসহায়তায়
যেন আবিষ্কার করা হয়েছে গল্পটিতে। এভাবে কোনো বিশেষ গ্রামকে নির্বিশেষ অসীমতায় পৌঁছে
দিয়েছেন লেখক এবং নামকরণটি ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

        আবার বলা যায় তেলেনাপোতা
আবিষ্কার আসলে আত্ম আবিষ্কার। নাগরিক মানসিকতায় গ্রাম বাংলার প্রতি আকর্ষণ নিছক দুদিনের
রোমান্সরস আস্বাদনের
  জন্য, এর পিছনে
কোনো মঙ্গল কামনা বা আন্তরিক যোগ নেই- সেই নাগরিক মানসিকতাই যেন আবিষ্কার করা হয়েছে
গল্পের মধ্য দিয়ে।

 

         আবার তেলেনাপোতা
আবিষ্কার হয়তো মনের তলদেশে চাপা পড়ে থাকা মানবতা টুকুকে আবিষ্কার। তাই নায়ক যামিনীর
মাকে কথা দেয় যামিনীকে গ্রহণ করার। কিন্তু অচিরেই নায়ককে আবিস্কার করতে হয় যে মানবতার
এই প্রেরণা ও ক্ষনস্থায়ী আবেগমাত্র- তাই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তেলেনাপোতার
স্মৃতি নিছক মায়াময় স্বপ্ন কথা বলে মনে হয়। অর্থাৎ মানব মনের গহনে লুকিয়ে থাকা
রহস্যকেই যেন প্রতিক্ষণে আবিষ্কার করা হয়েছে গল্পটিতে। এভাবে নামকরণটি সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা
লাভ করেছে।

 

         আবিষ্কার শব্দটির
ইংরেজি প্রতিশব্দ discovery এবং invention । যা প্রত্যক্ষ আছে অথচ অজানা তা খুঁজে বের
করা discovery। আর যা নেই তাকে খোঁজা বা উদ্ভাবন করা হল invention। নামকরণটির সরল তাৎপর্য
আর ব্যঞ্জনাধর্মী তাৎপর্যে এই উভয় অর্থই বাঙ্ময় হয়ে ওঠে এবং নামকরণটি সার্থকতা ও
শিল্প সুষমা লাভ করে।


 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top