দেবদেবীর সম্পর্কে
পরিবর্তনশীল চেতনার আলোকে বৈদিক ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা করো।
দেবদেবীর সম্পর্কে
পরিবর্তনশীল চেতনার আলোকে বৈদিক ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা করো।
ধর্মীয় অবস্থা ও দেবদেবী সম্পর্কে তোমার ধারণা লেখ।
ঋক বেদের স্তোএ
গুলির মধ্যে আর্যদের ধর্ম বিশ্বাসের আদি রুপের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের
চেতনা অবচেতনার সকল পদার্থের মধ্যে আর্যরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেছেন এমন কি প্রতিটি প্রাকৃতিক বস্তকে এক অদৃশ্য শক্তির
প্রকাশ হিসেবে উপলব্ধি করেছেন ।
মন্ডল দেবদেবীর
শ্রেনিবিভাগ
ঋকবেদে বহু দেবদেবীর কথা বলা হলে ও তাদের সংখ্যা 33 এর বেশি নয়। বিশ্বভূবনে এক একটি স্থানে পৃথক পৃথক দেবতা অবস্থান করে। ঋকবেদের ঋষিরা
বিশ্বভ্রমণকে তিন ভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন ধর্মীয় অবস্থা সৃষ্টি করেন। এর এক একটি
ভাগের স্থান বা ‘মন্ডল’ বলা হয়। সকলের উপর
অবস্থিত মন্ডলের অনেক নাম ছিল যথা- দ্যুলোক স্বর্গ আকাশ প্রভৃতি। সকলের নীচে ভূলোক
বা পৃথিবী অবস্থান করে। স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে অন্তরীক্ষ,বায়ু মধ্যমামন্ডল। দেবতাদের
কারোর অবস্থান দ্যুলোকে কারোর ভূলোক কারোর আবার অন্তরিক্ষের,ভূলোকের দেবতার মধ্যে রয়েছে
অগ্নি, সোম, ইন্দ্র, মরুতেরা হলেন অন্তরিক্ষের দেবতা। দ্যৌ,বরুন, সূর্য বিষ্ণু
ছিলেন দ্যুলোকের দেবতা।
পুরুষ ও স্ত্রী
দেবতা
আর্যদের ধর্মীয়
চিন্তায় পুরুষ দেবতার প্রাধান্য বেশি ছিল
যারা বেশিরভাগ আকাশে অবস্থান করতো। খুব কম সংখ্যায় স্ত্রী দেবতার উল্লেখ থাকলে ও তাদের
মধ্যে গুরুত্ব ছিল না। মানুষের মতো ক্রোধ, হিংসা, দয়া প্রভৃতি দোষগুণ আর্যরা দেবতাদের
চরিত্রে আরোপ করেছিলেন।
দ্যৌ ও ইন্দ্র
ঋকবেদের প্রাথমিক পর্বে দ্যৌ ছিলেন আকাশের দেবতা
বা পিতা এবং পৃথিবী ছিলেন মাতা। তিনি খাদ্য,জল প্রভৃতি দান করে মানুষের জীবনকে রক্ষা
ও পালন করতেন। পরর্বতিতে এদের গুরুত্ব হ্রাস পেতে এদের স্থলে বরুন,ইন্দ্র,অগ্নি জনপ্রিয়তা
লাভ করে। এদের মধ্যে ইন্দ্র ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় সবচেয়ে বেশি ঋকবেদের প্রায় ২৫০
স্তোএ ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়েছিল। যুদ্ধের দেবতা রূপে তিনি বজ্রের দ্বারা
অনুসরণকে বিন্যাস করেন। ইন্দ্র অসুরদের পুর
বা নগর গুলি ধ্বংস করার জন্য পরন্দ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বৃষ্টিও আলো দেবতা রূপে
পৃথিবীতে শস্য-শ্যামলা করে তোলেন। তার পিতা দ্যৌ ও মাতা ছিলেন পৃথিবী। অনেকে ইন্দ্র দেবতা হিসেবে স্বীকার না করে কোনো বিজয়ী গোষ্ঠী নেতা বা পুরহিত বলে গণ্য করেন। এজন্য
পরবর্তী দেবতা আরোপ করা হয়।
বরুন
ঋকবেদে বরুন পাপ
ও পুন্যের দেবতা হিসেবে পূজিত হত। তিনি হলেন
বিশ্ব জগতের নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা করার দেবতা। তার আদেশে ঋতুচক্র নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তিত
হত। এছাড়াও বরুন ন্যায়-নীতি রক্ষাকারীর মহান দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি ছিলেন
আকাশের অধীশ্বর তিনি বৃষ্টির জলের দ্বারা পৃথিবীকে শীতল করেন এবং স্বর্ণ রথে চড়ে অন্তরীক্ষে
বিচরণ করেন।
অন্যান্য দেবতা
সন্ধি, শপথ,ও প্রতিজ্ঞা রক্ষার দেবতা হিসেবে পরিচিত
ছিল। তার নাম নিয়ে শপথ করা হত। এবং তা রক্ষা করা হত। এছাড়া অর্জুন ছিল বৃষ্টির দেবতা।
সূর্য ছিলেন আলোকের দেবতা। সাবিত্রী ছিলেন
সূর্য মন্ডলের অধিষ্ঠাত্রী, প্রানছাত্রী, দেবী, যম
মৃত্যুর এবং মরুৎ ঝড়ের দেবতা রুপে
পূজিত হতেন।
রুদ্র বিষ্ণু
ঋকবেদের রুদ্র ও বিষ্ণু ছিলেন গৌন দেবতা। অনেকের
রুদ্রকে আর্যদের দেবতা বলে মনে করেন। তিনি রুষ্ট হলে তার রাসে সব ধ্বংস হয়ে যেত এই
মতাদর্শ প্রচলিত ছিল। মাত্র ছয়টি স্তোত্র বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়েছিল। ঋকবেদে
বিষ্ণুকে সূর্যের এক বিশেষ সত্ত্বারুপে কল্পনা করা হয়েছে। ঋকবেদে অগ্নি বিশেষর মর্যাদা
অধিকারী ছিলেন। প্রায় দুই শতাধিক স্তোত্র তার উদ্দেশ্য চরিত্র হয়ে ছিল। তিনি আর্যদের
জীবনে নিত্য সঙ্গী, অগ্নি যেমন যজ্ঞের দেবতা তেমনি গৃহের দেবতা। অগ্নি কোনো সাধারণ
দেবতা নয়, তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রান এবং সকল বস্তুর অন্তরে বিরাজমান।
ঋকবেদে অগ্নি বিশেষ
মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। প্রায় দ্বিশতাধিক স্তোত্র তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত হয়ে ছিল।
যিনি অর্যদের জীবনের নিত্য সঙ্গী। অগ্নি যেমন যজ্ঞের দেবতা, তেমনি গৃহের ও দেবতা। অগ্নি
কোনো সাধারণ দেবতা নন, তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রাণ এবং সকল বস্তুর অন্তরে বিরাজমান।
পূজা অর্চনার পদ্ধতি
বৈদিক আর্য দেবতাদের
সন্তুষ্ট করার জন্য ঘৃতাহুতি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। সমস্ত গ্ৰাম বা উপজাতি মিলিতভাবে
বা একক ভাবে যজ্ঞের ব্যায়ভর বহন করতেন। এবং ব্রাহ্মণরা যজ্ঞের মধ্য দিয়ে দান গ্ৰহন
করতেন এবং প্রচুর সম্পদের অধিকারী হতেন। যজ্ঞের সময় মন্ত্র উচ্চারণ করে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি
দেওয়া হত। যজ্ঞের এই জটিল প্রক্রিয়া ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারোর পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব
ছিল। না যজ্ঞে দেবতাদের কাছে সুবৃষ্টি, ভালো ফসল, যুদ্ধে বিজয়, সম্পদ, দীর্ঘজীবন,
প্রভূতি প্রার্থনা করা হত। এভাবে ঋক বৈদিক যুগে প্রকৃতি কেন্দ্রিক যে সকল দেবতার অস্তিত্ব
ছিল পরবর্তী বৈদিক যুগের তার অনেকাংশে পরিবর্তন ঘটে। এভাবে বৈদিক যুগে দেবতা কেন্দ্রিক
ঐতিহ্য বজায় ছিল।
(বি: দ্র: – বোঝার সুবিধার জন্য পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষায় পয়েন্ট ছাড়া লেখা উত্তম)
- পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের উল্লেখিত ভারতের পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনের পরিচয় দাও
- ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব
- History এবং ইতিহাসের পার্থক্য
- নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলতে কী বোঝো?
- প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর
- পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক অবস্থা ঋক বৈদিক যুগের তুলনায় কী কি ভাবে পৃথক ছিল।
- মেহেরগড় উৎখননের গুরুত্ব আলোচনা করো