ভাষাবিজ্ঞান
• সংজ্ঞা: মানুষের বাগযন্ত্র থেকে উচ্চারিত অর্থপূর্ণ ধ্বনি সমষ্টি দিয়ে গঠিত
একটি নিরাকার ব্যবস্থা যার সাহায্যে কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ মনের ভাব প্রকাশ
করে অর্থাৎ ভাষা হল মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিগত প্রতীকের
সমবায় যার মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠী পরস্পর ভাব বিনিময় করে।
• ভাষার দুটি দিক: ভাষার সংজ্ঞা থেকেই ভাষার দুটি দিক স্পষ্ট
হয়ে ওঠে। একটি হলো তার ধ্বনিগত দিক, অপরটি অর্থগত। অর্থাৎ একটি আধার আর অন্যটি আধেয়। আধার হলো ধ্বনি বা
ধ্বনিগুচ্ছ যার সাহায্যে ভাষা আত্মপ্রকাশ করে। আধেয় হল অর্থ- যার সাহায্যে শ্রোতা
বক্তার মনের ভাব বুঝতে পারে। তবে এই আধার আধেয় সম্পর্ক অনিত্য অর্থাৎ
পরিবর্তনশীল।
যেমন- (ভিন্ন আধার)
ইংরেজি- ওয়াটার
হিন্দি- পানি
বাংলা- জল
জার্মান- ভাসের
লাতিন- আকোয়া
একটি পানীয় তরল। তৃষ্ণার্ত হলে যা অপরিহার্য। (একই আধেয়)
• ভাষার দুটি মাত্রা: অনেক ভাষারই দুটি মাত্রা আছে। একটি হল
মৌখিক বা কথ্য অপরটি সাহিত্যিক বা লেখ্য।মুখে কথা বলে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার
জন্য যে ভাষারূপ ব্যবহার করে তা কথ্য ভাষা। আর লেখা বা সাহিত্য সৃষ্টির জন্য যে
ভাষা ব্যবহৃত হয় তা লেখ্য ভাষা।
ভাষার পরিবর্তন: লেখার ভাষার তুলনায় মানুষের মুখের ভাষা
অনেক বেশি পরিবর্তনশীল। তাই ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় মুখের ভাষার গুরুত্ব বেশি। এই
পরিবর্তনের প্রধান দুটি দিক হল-
১. অঞ্চল
ভেদে পরিবর্তন।
২. কাল ভেদে
পরিবর্তন অঞ্চল ভেদে মানুষের মুখের ভাষার তারতম্য ঘটে। তাই বাংলা ভাষা বললেও
কলকাতা,
বাংলাদেশ, কোচবিহার, পুরুলিয়া প্রভৃতি জেলার ভাষার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
এই পরিবর্তনকে বলা হয় উপভাষা গত ভেদ। আবার প্রাচীন বা মধ্যযুগের ভাষার সঙ্গে
বর্তমানকালের ভাষার যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। কারণ সময়ের সাথে সাথে ভাষাও পাল্টে যায়।
এই পরিবর্তন কালগত। এর অনুসন্ধান ইতিহাস অনুসন্ধানের মতো কালানুক্রমিক। তাই
ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় নানা দিক ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।