“নীলধ্বজের
প্রতি জনা” মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাদশ শ্রেনি প্রশ্ন উত্তর।
“নীলধ্বজের প্রতি জনা” মাইকেল মধুসূদন দত্ত
বাংলা সাহিত্যে ঊনিশ শতকের নবজাগরণের সার্থক রূপকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের
“নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতায় তেজস্বিনী জনা তার স্বামী নীলধ্বজের প্রতি
এই প্রশ্নসূচক উক্তিটি করেছেন।
জগতে জীব জড় সকলেই নিয়মের অধীন। পুরাকাল থেকে বিশেষ কিছু রীতিনীতি সৃষ্টি
হয়েছে।মহান রথীগণ সেই রণনীতি মেনেই শত্রু মোকাবিলায় ব্রতী হন।মহাণ রথীগণের এই যুদ্ধনীতি
বা প্রথাকেই মহারথী প্রথা বলা হয়। নিরস্ত্র যোদ্ধাকে সশস্ত্র যুদ্ধে আহবান, অসম যোদ্ধার
সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্ব প্রকাশ বা যুদ্ধে ছলনার আশ্রয় নেওয়া অনুচিত- যুদ্ধ সম্পর্কিত
এমনই নীতি বা প্রথাগুলি মহারথীপ্রথার নিদর্শন।
যুদ্ধে এই মহারথী প্রথা লংঘন করেছেন তৃতীয় পাণ্ডব, মহাভারতের মহাধনুর্ধর
পার্থ বা অর্জুন।
অর্জুন জনার পুত্র প্রবীরের সঙ্গে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন, অবলীলায়
তাকে বধ করেছেন – যা মহারথীপ্রথা বিরুদ্ধ।
তাছাড়া দ্রৌপদীর সয়ম্বর সভায় ক্ষত্রিয় হয়েও অর্জুন ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে
উপস্থিত হন। জনার মতে ব্রাহ্মণ বলেই বীর ক্ষত্রিয় রাজন্যবর্গ তার সাথে যথাযোগ্য সংগ্রাম
করেননি। জনার কথায়-
“ছদ্মবেশে
লক্ষ্য রাজ্যে ছলিল দুর্মতি
সয়ম্বরে”-
ছলনায় অর্জুন জয়লাভ করেন।
খাণ্ডবদাহনে ও অর্জুন কৃতিত্বের অধিকারী নন। সেখানেও অগ্নিদেবকে প্রীত করার
জন্য তিনি কৃষ্ণের সহায়তা গ্রহণ করেন। দেব প্রদত্ত গান্ডিবধনু, অক্ষয়তূণ ইত্যাদির
সাহায্যে খাণ্ডবদহন করে লক্ষ লক্ষ নিরীহ জীবকে হত্যা করেন। “দহিল খান্ডব দুষ্ট
কৃষ্ণের সহায়ে”।
মহাযোদ্ধা ভীষ্মবধের ক্ষেত্রেও অর্জুন মহারথী প্রথা লঙ্ঘন করেন। ভীষ্মের
প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ অম্বা পরজন্মে শিখন্ডীরূপে সম্মুখে দাঁড়ালে ভীষ্ম পূর্বপ্রতিজ্ঞা
অনুযায়ী অস্ত্র ত্যাগ করেন। সেই সুযোগে অর্জুন ভীষ্মকে শরাঘাতে জর্জরিত করেন।
মহা ধনুর্ধর দ্রোণাচার্য বধে ও ছিল ছলনার আশ্রয়। অস্ত্রত্যাগ না করলে
তিনি দেবতাদের ও অজেয়। তাঁকে “অশ্বত্থামা হত ইতি গজ”-এই বাক্যে ছলনা করে
যুধিষ্ঠির। যখন তিনি পুত্র শোকাতুর তখন তাঁকে বধ করা হয়।
কর্ণবধ তো মহারথীপ্রথা লঙ্ঘনের চরম নিদর্শন। ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্ণ ব্রাহ্মণ
এবং গুরু পরশুরামের অভিশাপে অভিশপ্ত ।যখন তার রথচক্র মেদিনীগ্রস্ত এবং দিব্যাস্ত্র
বিস্মৃত তিনি, তখন নিরস্ত্র অসহায় কর্ণকে বধ করেন অর্জুন।
এভাবেই বীরযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বারংবার ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন অর্জুন। লংঘন
করেছেন মহারথী প্রথা। চাঁদের কলঙ্কের মতো যা তার চরিত্রের নিষ্কলঙ্ক হয়ে রইল।