পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের উল্লেখিত ভারতের পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনের পরিচয় দাও |

 পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের উল্লেখিত ভারতের
পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনের পরিচয় দাও

 


    এশিয়া মহাদেশের দক্ষিনে অবস্থিত ভারতবর্ষ
হল ত্রিভুজাকৃতি একটি বিশাল উপদ্বীপ। উত্তর, উত্তর পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম, সুবিশাল পর্বতশ্রেণী
এবং অপর তিন দিকে সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ভারত এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন।
মহাদেশ সুলভ বিশালতা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করার
পণ্ডিতেরা ভারতবর্ষকে ‘ক্ষুদ্রাকৃতি মহাদেশ বা উপদেশ’ আখ্যা দিয়েছেন।

    প্রাচীন সাহিত্য গ্রন্থ, নাট্যশাস্ত্র পুরান
প্রকৃতিতে ভারতবর্ষের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা প্রয়াস
দেখা যায়। মূলত ভারতকে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিন্যস্ত করার প্রয়াস পরবর্তী বৈদিক
যুগ থেকে শুরু হয়। ঐতরেয় ব্রাহ্মনে ভারতের পাঁচটি অঞ্চল বা বিভাগের উল্লেখ আছে। পরবর্তী
বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত ভারতের পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাগ হলো।

(১) প্রাচীদিশ্ —— পূর্বাঞ্চল

(২) দক্ষিণাদিশ্ —- দক্ষিণাঞ্চল

(৩) প্রতীচীদিশ্ —— পশ্চিমাঞ্চল

(৪) উদিচীদিশ —— উত্তরাঞ্চল

(৫) মধঞ্চল

     তবে
একথা স্বীকার্য যে, ভারতের ভৌগোলিক বিভাজনের জন্য মধ্যাঞ্চল বা মধ্যবর্তী ভূখণ্ডকে
মূল বা প্রধান ধরে অঞ্চল আপেক্ষিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

(১) প্রাচীদিশ (পূর্বাঞ্চল) প্রাচীনদিশ হ
অর্থাৎ পূর্বাঞ্চল বলতে মধ্যদেশ বা আর্যাবর্তের পূর্বে বাংলা, বিহার নিয়ে সংঘটিত পূর্ব
ভারতকে নির্দেশ করে।

(২) দক্ষিণাদেশ—- মধ্যপ্রদেশের দক্ষিনে
দক্ষিণা পথ, দক্ষিণাত্য প্রভৃতি দক্ষিনাঞ্চলের অন্তর্গত।

(৩) 
প্রতীচীদিশ- (পশ্চিমাঞ্চল) প্রতীচীদিশ বা অপরান্ত বা পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ পশ্চিম
ভারতকে নির্দেশ করে। রাজপুতানা, গুজরাট প্রভৃতি অঞ্চল এই ভৌগলিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত
ছিল।

(৪) উদিচীদিশ- উদিচীদিশ বা উত্তরঞ্চল অর্থাৎ
উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতেকে নির্দেশ করে।

(৫) মধ্যঞ্চল- সরস্বতী নদীর অববাহিকা অঞ্চল
থেকে শুরু করে রাজমহল পাহাড়ের গাঙ্গেয় সমতলভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই অঞ্চলের
মধ্যে দিয়ে দুটি প্রধান নদী অর্থাৎ গঙ্গা ও যমুনা প্রবাহিত।

    ধর্মশাস্ত্রকার মনু অবশ্য দক্ষিণা পথের উল্লেখ
করেননি। কিন্তু তিনি আর্যবর্ত অর্থাৎ সমগ্র উত্তর ভারতকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন (১)
ব্রহ্মাবত, (২) ব্রহ্মাশীদশ (৩) মধ্যদেশ(৪) মিলেচ্ছদেশ। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রে ভারতের
চারটি ভৌগলিক এককের  পরিচয় পাওয়া গেলেও রাজশেখর
তার কাব্যমীমাংসা গ্রন্থে উপরিক্ত পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনকে স্বীকার করেন পরবর্তী বৈদিক
সাহিত্যের ভারতের যে পাঁচটি ভৌগোলিক বিভাজনের কথা জানা যায়, রাজশেখরর কাব্যমীমাংসা
গ্রন্থে তার স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top