শিক্ষার লক্ষ্য জাতীয় বিকাশ- আলোচনা করো | The goal of education is national development | Note PDF |


 শিক্ষার লক্ষ্য জাতীয় বিকাশ


“শিক্ষার লক্ষ্য জাতীয় বিকাশ”- আলোচনা
করো।

    আধুনিক কালের যে-কোন স্বাধীন গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রে শিক্ষার লক্ষ্য কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের পাশাপাশি রাষ্ট্রের
কল্যাণ বা জাতির বিকাশের কথাও বিবেচনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিকে নিয়ে 
সমাজ এবং সমাজকে নিয়েই জাতি গঠিত
হয়।

(১) জাতীয় ঐক্য রক্ষাঃ– প্রতিটি রাষ্ট্রেই একাধিক জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। প্রত্যেকেরই
একটি নির্দিষ্ট সমাজ আছে। নিয়মকানুন, প্রথা, সংস্কৃতি ইত্যাদি দিক থেকে সেই সমাজগুলির
মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। শিক্ষার লক্ষ্য হবে বৈচিত্র্যকে বজায় রেখে সমাজের
মধ্যে ঐক্য স্থাপন ও সমগ্র জাতিকে শক্তিশালী করা। সমাজ-সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে স্বীকার
করে নিয়ে এক জাতি, এক প্রাণ, একতা
এই দর্শনকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা
করতে হবে।

(২) জাতীয় সংকট নিরসনঃ– ব্যক্তি ও সমাজজীবনে যেমন অনেক সমস্যা দেখা দেয়,
তেমনই জাতির জীবনেও অনেক সমস্যার উদ্ভব হয়। সেই সমস্যার রূপ, সমাধানের উপায়, সেখানে
ব্যক্তির ভূমিকা —এসব সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে শিক্ষাই। আমরা আমাদের ভূমিকা পালন
করে জাতীয় সমস্যা সমাধানে প্রয়াসী হই, যার ফলে জাতির বিকাশ অক্ষুন্ন থাকে।

(৩) মানবসম্পদের বিকাশঃ- জাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং সামাজিকভাবে জাতির
সমৃদ্ধির জন্য দ্বিমুখী প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এই দ্বিমুখী প্রচেষ্টা হল
বস্তুসম্পদ
সংগ্রহ করা এবং মানবসম্পদের বিকাশ ঘটানো। কমিশন জাতির বিকাশে বস্তুসম্পদের চেয়ে মানবসম্পদ
বিকাশের ওপরই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(৪) সামাজিক ঐক্য স্থাপনঃ- শিক্ষার পাঠক্রম ও সহ-পাঠক্রম কার্যাবলির দ্বারা
শিক্ষার্থীদের সামাজিক ঐক্য স্থাপনের পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

(৫) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণঃ– বৃত্তি শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে এবং
জাতীয় আয়ের সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, যা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত
করবে।

(৬) ভাষা সমস্যার সমাধানঃ– পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন ও জাতীয় বিকাশের জন্য ভাষা
সমস্যার সমাধান ও জাতীয় বৈশিষ্ট্য সমন্বিত পাঠক্রম রচনা খুবই জরুরী। মাতৃভাষার মাধ্যমে
শিক্ষাদান, একটি ভাষার সঙ্গে অপর একটি ভাষার মিল ও অমিল এবং জাতীয় বৈশিষ্ট্য পাঠক্রমে
স্থান দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করলে শিক্ষার্থীরা অন্য ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং
জাতীয় বিকাশ ঘটবে।

(৭) দেশপ্রেম জাগ্রত করে গণতান্ত্রিক ভাবধারার বিকাশ সাধনঃ বিদ্যালয়ে জাতীয়
দিবস পালন, জাতীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় চেতনা ও গণতান্ত্রিক
ভাবধারার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন, যা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক ভাবধারার বিকাশেরই নামান্তর।

(৮) জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার শিক্ষাঃ– শিক্ষার মধ্যে জাতীয় সংহতি
ও আন্তর্জাতিকতার বোধ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সালিত করতে হবে, যা জাতীয়
বিকাশ, অক্ষুন্ন রাখতে সহায়তা করবে।

(৯) দূরশিক্ষার প্রসারঃ- জাতীয় বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে হলে দেশের যে সকল
শিশু নানা কারণে প্রথাগত শিক্ষার আওতায় আসতে পারে না বা ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার
দেশে সব মানুষকে প্রথাগত শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভবপর হয় না, তাদের জন্য দূরশিক্ষার
ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন।

(১০) অনগ্রসর শ্রেণির শিক্ষার প্রসারঃ– শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণি বলতে
তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়, নারী এবং দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বোঝায়।
সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে
আসন সংরক্ষণ এবং বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারলে জাতীয়
বিকাশ সম্ভব হবে।

(১১) সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাঃ- ব্যক্তিগত বিকাশ, সামাজিক বিকাশ ও জাতীয়
বিকাশকে অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা
করা।


More Notes:- English

                        Education

                        Bengali

                        History

                        Philoshopy

                        Geography

                        More Subject

Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top