নুন -জয় গোস্বামী | সমস্ত SAQ | একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Semester-II

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতা থেকে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী দ্বিতীয় সেমিস্টার উপযোগী সমস্ত SAQ প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া হল।

নুন -জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতা থেকেসমস্ত SAQ প্রশ্ন-উত্তর

১. “আমরা তো অল্পে খুশি” – উদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে বক্তার কোন জীবনবোধের চিত্র প্রকাশ হয়েছে?

 রবীন্দ্র জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর লেখা “ভুতুম ভগবান” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত “নুন” কবিতা থেকে গৃহীত প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে নিম্নবিত্ত সমাজের জীবনবোধ চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে। 

        এই নিম্নবিত্ত মানুষেরা অল্পে খুশি হয়। কারণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সামান্যই। তারা জানে তাদের সামান্য রুজি রোজগারে উচ্চবিত্ত জীবন-যাপনে বিলাস-বৈভব পূরণ সম্ভব নয়। তাই বেশি কিছু আশা করে পাওয়া সম্ভব নয় জেনেই তারা “অল্পে খুশি”।বেশি কিছু চেয়েও তারা পাবে না। তাদের দুঃখের প্রকাশে কারো সহানুভূতি মিলবে না। “অন্নদামঙ্গল” কাব্যে ঈশ্বরী পাটনীর যেমন কামনা ছিল- “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”। তেমনই আলোচ্য কবিতায় নিরন্ন অসহায় মানুষদের দুঃখ, দারিদ্র-পীড়িত সাধারণ জীবন-যাপনে খুশি থাকার ব্যঞ্জনাই প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে প্রকাশিত হয়েছে। 

২. “কী হবে দুঃখ করে”- কী নিয়ে দুঃখ করার কথা বলা হয়েছে? কবির এমন মন্তব্যের কারন কী? 

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতাটিতে দিন আনা দিন খাওয়া স্বল্পআয়ের মানুষগুলির সাধারণ ভাত-কাপড়ে দিন চলে যায়।সেই শ্রমজীবী, দারিদ্র শোষিত মানুষদের কোনরকমে জীবন-যাপনের অশেষ দুঃখের কথা এখানে বলা হয়েছে।

         কবির এমন মন্তব্যের কারণ- বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদশীল ধনী সম্প্রদায়ের দ্বারা সামাজিক উত্থান-পতন নিয়ন্ত্রিত হয়।নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধিতে মনোযোগী এই ধনী সম্প্রদায়ের কাছে দরিদ্র শ্রেণীর অবস্থা শোচনীয় হলেও কিছু যায় আসে না, তা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষগুলি বুঝে গিয়েছে। যে সমাজে সাহায্য সহযোগিতা, মমত্ব ও সহানুভূতি মেলেনা সেখানে দুঃখ প্রকাশ করে লাভ নেই। শত দুঃখেও তারা না পাওয়ার বেদনাকে সঙ্গী করে হাসিমুখে সবকিছু মেনে নিয়ে “কি হবে দুঃখ করে” এই কথায় বিশ্বাস রেখে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলে। 

৩. “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাত-কাপড়ে চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে”- তাৎপর্য লেখ। 

রবীন্দ্র জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর লেখা “ভুতুম ভগবান” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত “নুন” কবিতা থেকে আমরা জানতে পারি সাধারণ নিম্নবিত্ত, স্বল্প উপার্জনশীল মানুষদের সাধারণ ভাত-কাপড়ে কোনরকম খেয়ে-পড়ে বেঁচে থেকে দিন চলে যায়। কিন্তু এই তীব্র আর্থিক অনটনের সংসারে সঞ্চয় বা পুঁজি কিছু থাকে না বলে পরিবার-পরিজন অসুস্থ হলে তাদেরকে সুস্থ করতে ঋণের দায়ে জর্জরিত হতে হয়। তাই প্রশ্নদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত, অসুখ ধার-দেনায় জর্জরিত মানুষদের জীবন যাপনের গ্লানির কথাই “নুন” কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। 

৪. “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে”- উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য আলোচনা কর। 

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতার প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ও জীবন সংগ্রামের কথা প্রকাশিত হয়েছে। সামান্য চাহিদা ও অল্পে খুশি এই দরিদ্র মানুষগুলি জীবনের নানাবিধ যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে সাধারণ ভাত-কাপড়ে কায়ক্লেশে দিন অতিবাহিত করে। এই নিয়ে তাদের কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই। কিন্তু দারিদ্র্যপীড়িত জীবনেও অসুখ-বিসুখ নিত্যসঙ্গী।তাই বিপদের দিনে সঞ্চয় বা পুঁজি থাকে না বলে অসুস্থতার সময়ে অন্যের কাছে হাত পাতা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ খোলা থাকে না। এই ভাবেই অর্থনৈতিক সংকটকে সঙ্গী করে ঋণগ্রস্ত বেঁচে থাকার মানসিক অভিঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে তার থেকে মুক্তি পেতে গঞ্জিকা সেবনের ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। প্রশ্নদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে সেই মানসিক যন্ত্রণা ও ব্যঞ্জনা মুক্তির ভুল পথের ব্যঞ্জনায় বিশেষিত হয়েছে। 

৫. “সব দিন হয় না বাজার, হলে হয় মাত্রাছাড়া বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপ চারা”- তাৎপর্য লেখ।

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতা থেকে জানতে পারি আর্থিক দৈন্যদশার কারণে এই নিম্নবিত্ত মানুষদের পক্ষে সব দিন বাজার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অভাবী মানুষ গুলোর প্রতিদিন বাজার করার সামর্থ্য না থাকলেও যেদিন বেশি রোজগার হয় সেদিন মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বপ্নের উচ্ছ্বাস ও তাগিদে এলোমেলো বেহিসাবি খরচ হয়ে যায়।এমনকি সুপ্ত শখ শৌখিনতা ও সৌন্দর্য বিলাসে মত্ত হয়ে বাজার থেকে গোলাপ চারাও কিনে আনে।

      প্রকৃতপক্ষে শত দারিদ্র্য ও অভাব বোধ সত্বেও অভাবী মানুষ গুলোর মন থেকে সৌন্দর্যবোধ ও শুভচেতনা যে নষ্ট হয়ে যায় না প্রশ্নদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে কবি সেই বিষয়টির অবতারণা করেছেন। 

৬. “কিন্তু পুঁতবো কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে? সে অনেক পরের কথা, টান দিই গঞ্জিকাতে”- এই সংশয়ের কারণ কি? গঞ্জিকা সেবনের মধ্য দিয়ে বক্তার কোন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে? 

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতা থেকে জানতে পারি আর্থিক অনটনে ভুগতে থাকা মানুষগুলোর হাতে এমনিতে টাকা না থাকলেও হাতে যখন সামান্য টাকা থাকে তখন মনের মধ্যে অবদমিত সৌখিনতা ও সৌন্দর্য বিলাসকে চরিতার্থ করতে বাজার থেকে গোলাপ চারা কিনে আনে। কিন্তু যে গরিব দুঃখী মানুষ গুলোর মাথাগোঁজার সামান্য জায়গাটুকু ছাড়া আর কোনও জায়গা নেই, তাদের কাছে সৌন্দর্য বিলাসিতা বেমানান। তাই ঝোঁকের বসে বাজার থেকে কিনে আনা গোলাপ চারা কোথায় বসাবে এবং তাতে কি আদৌ ফুল হবে – সেই সংশয়ই প্রকাশ পেয়েছে। 

             অনিশ্চয়তা, অভাব, আর্থিক টানাপোড়েন এই অভাবী মানুষ গুলোর নিত্যসঙ্গী। তাই প্রাত্যহিক জীবনের 

অপূর্ণ চাহিদাগুলো পূর্ণ করতে না পারার প্রবল যন্ত্রণাবোধ থেকে মুক্তি পেতে সেই দীন দরিদ্র মানুষগুলি সামাজিক দিক থেকে দৃষ্টিকটু ও স্বাস্থ্যহানিকর গঞ্জিকা সেবনের ভ্রান্ত নেশায় ডুবে থাকে। 

৭. “হেসেখেলে কষ্ট করে আমাদের দিন চলে যায়”- উদ্ধৃতাংশটিতে বক্তার কি ধরনের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তা লেখ। 

জয় গোস্বামীর লেখা “ভুতুম ভগবান” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত “নুন” কবিতায় শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবন যন্ত্রণার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এই মানুষগুলোর জীবনের চাহিদা শুধুমাত্র প্রয়োজনের। অতিরিক্ত চাহিদা তাদের নেই। অথচ যে ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু তাদের দরকার, অনেক সময় সেই সামান্য চাহিদাটুকুও পূর্ণ হয় না। কিন্তু এজন্য তাদের কোন দুঃখ বা আক্ষেপ নেই। বরং দুঃখ যন্ত্রণাময় দিন কাটাতে কাটাতে সেটাকেই তারা জীবনের চরম বাস্তবতা বলে মেনে নিয়েছে। অভাবী সংসারে পয়সা হাতে এলে কখনো কখনো সামান্য শখ পূরণ করতে গিয়ে একটু বেহিসাবি খরচ হয়ে গেলেও অভাব-অনটন, দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা তাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই দুঃখের সংসারে যা জোটে তারা তাতেই খুশি। তারা অধিক চাহিদা তাদের নেই। 

৮. “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়, নুন নেই ঠান্ডা ভাতে”- এর কারণ কি? 

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতায় যে নিপীড়িত,বঞ্চিত, নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষের পরিচয় পাই তারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে দুপুর রাতে যখন বাড়ি ফেরে তখন তাদের সঙ্গী হয় তীব্র ক্ষিদের দহন জ্বালা।কিন্তু বাড়িতে ফিরে তারা দেখে তাদের ঠান্ডা ভাতে সামান্য একটু নুনটুকুও নেই। অভাবের তাড়নায় দুবেলা রান্না করা গরম ভাত খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। তারা এই বাস্তবতাকে তাদের 

ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছে। কিন্তু ঠান্ডা ভাতে সামান্য নুনের সংস্থান না হওয়ায় চরম অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও বৈষম্যের ছবিকে কবি এখানে তুলে ধরেছেন। 

৯. “রাগ চড়ে মাথায় আমার আমি তার মাথায় চড়ি, বাপ-বেটা দুভাই মিলে সারা পাড়া মাথায় করি”- পংক্তি দুটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

জয় গোস্বামীর লেখা “নুন” কবিতা থেকে জানতে পারি অল্পে খুশি হত দরিদ্র মানুষেরা তাদের জীবনে দুঃখকে মেনে নিয়ে সেই অর্থাভাবকে সঙ্গী করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে অর্থাভাব এমনই চরম অসহনীয় হয়ে ওঠে যে অতি সাধারণ ভাত-কাপড়েও যেন এদের দিন চলতে চায় না। তাই উদয়াস্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুপুর রাতে বাড়ি ফিরে শুকনো ভাতে সামান্য লবণটুকুও না পেয়ে বহুদিনকার মনের মধ্যে সঞ্চিত সুপ্ত ক্ষোভ উগড়ে দেয়। এরা যেন ক্ষুধার্ত পেটে সমস্ত রকম সামাজিক সম্ভ্রম, শিষ্টাচার, ভদ্রতা জনিত প্রথাকে ভেঙে ফেলতে চায়। তাই ক্ষিদের জ্বালায় রাগে কিংবা দুঃখকে ভুলতে নেশার ঘোরে “বাপ-বেটা” অসংজাত আচরণ ও অশান্তিতে চেঁচিয়ে সারা পাড়া মাথায় করে। প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শ্রমিকশ্রেণীর উপর ঘটে চলা সামাজিক বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে। 

১০. “আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক”- কার কাছে কেন এই দাবি? 

রবীন্দ্র জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর লেখা “ভুতুম ভগবান” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে  শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ তথাকথিত সমাজব্যবস্থার উচ্চ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বা শাসকশ্রেণীর কাছে এই দাবি করেছে। 

                  আলোচ্য কবিতায় “সামান্য লোক” অর্থাৎ দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ সাধারণ ভাত-কাপড়, অসুখ, ধারদেনা এবং নিত্য অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে কোনো রকমে বেঁচে থাকে। সময়ের পরিবর্তন হলেও তাদের জীবনের দুঃসময় যেন কাটতেই চায় না। সামান্য প্রাপ্তিতেই খুশি এই মানুষগুলোর হাতে কোনদিন হয়তো বাজার করার মতো সামর্থ্যও থাকে না। আবার কোনো দিন টাকা পয়সা হাতে পেলেও মাত্রাছাড়া বাজার করে ফেলে। এরা জীবনে বেশি কিছু চায় না কারণ এরা জানে বেশি চাইলেও তারা তা অর্জন করতে পারবে না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই উদয়াস্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে “দুপুরে রাতে” বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে সামান্য নুন টুকুও নেই দেখে মনের মধ্যে সঞ্চিত ক্ষোভকে আর সংযত রাখতে পারে না। তাই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সারা পাড়া মাথায় করে চেঁচিয়ে ঘোষণা করে “আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক”। প্রকৃতপক্ষে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই শ্রমজীবী মানুষ গুলো তাদের জীবনের এই সামান্য প্রত্যাশা পূরণের সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত দাবিকে সমাজের উচ্চবিত্ত শাসকশ্রেণীর কানে পৌঁছে দিতে চায়।

নুন কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রণা।

Table of Contents

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top