শিক্ষার ব্যাক্তিতান্তিক লক্ষ্য বলতে কি বোঝ ? ব্যাক্তিতান্তিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতি বা ব্যাক্তিতান্তিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি লেখ। অথবা শিক্ষার লক্ষ্য হল “ব্যাক্তিগত বিকাশ” আলোচনা করো।
শিক্ষার যে সকল লক্ষ্য ব্যক্তি কেন্দ্র করে স্থির করা
হয়, সেগুলিকে শিক্ষার ব্যাক্তিতান্তি লক্ষ্য বলে।
শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক
এবং নান্দনিক বিকাশ সাধন হল শিক্ষার অন্যত্ম লক্ষ্য। শিশুর মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলিকে
সঠিক পথে পরিচালিত করে শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
শিশুর বা শিক্ষার্থীর সুসংহত বিকাশ বলতে ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনের সুষম বিকাশকেই বোঝায়।
যেমন—
(১)
দৈহিক বিকাশঃ– জন্মের পর থেকে একটি শিশুর
স্নায়ুতন্ত্র, অন্তক্ষরা গ্রন্থি এবং চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা প্রভৃতি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের
স্বাভাবিক বিকাশ শুরু হয়। পরিচ্ছন্ন ও অনুকূল পরিবেশেই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব।
তাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল—বলিষ্ঠ দেহে বলিষ্ঠ মন তৈরি করা।
(২)
মানসিক বিকাশঃ– মানসিক বিকাশ বলতে বুদ্ধির
বিকাশের সঙ্গে বিভিন্ন মানসিক প্রক্রিয়্থি সামগ্রিক বিকাশকে বোঝায়। শিশুর চিন্তন,
কল্পনা, স্মৃতি, যুক্তিকরণ, বুদ্ধি, সৃজনশীলতা প্রভৃতি যাতে পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করে
সেজন্য শিশু শিক্ষার পাঠক্রমে সৃজনমূলক বিভিন্ন বিষয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
(3) প্রাক্ষোভিক
বিকাশ : শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল, শিশুর আবেগ বা প্রক্ষোভের বিকাশ যায়ে যথাযথভাবে
ঘটে তার ব্যবস্থা করা। খেলাধুলো, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, দলগতভাবে
কাজ কর ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ব্যক্তির প্রক্ষোভের বিকাশ ঘটানো।
(4)
বৌদ্ধিক বিকাশ : পরিবেশকে সঠিকভাবে জানতে,
জীবনে চলার পথে নানাবিধ সমস্যাকে বুঝতে, বিশ্লেষণ ও সমাধান করতে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে
অনুমান করে সেইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন হল বিভিন্ন কার্যসূচির
মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটানো।
(5)
নৈতিক বিকাশ : শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক
বোধ সৃষ্টি করা, নৈতিকতার অনুশীলন করা এবং ভবিষ্যতে নৈতিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করা বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ। অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা নৈতিক বিকাশেরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন—মনীষীদের
জীবনী পাঠ, বিদ্যালয়ের প্রার্থনা, সমাজসেবামূলক কাজ ইত্যাদি।
(6)
সৃজনশীলতার বিকাশ : প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যেই
সৃজনশীলতার বীজ লুকিয়ে আছে। নৃত্যগীত, বাদ্য, নাটক, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প, অঙ্কন
প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যক্তির সৃজনশীলতা দেখা যায়। ব্যক্তির সৃজনশীলতার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রটি
খুঁজে বের করতে হবে।
(7) কৃষ্টি
ও সংস্কৃতিগত বিকাশ : দেশ ও জাতির কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা, গু কৃষ্টি ও
ঐতিহ্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ করা, সঙ্লন ও উন্নয়নে
সার্থকভাবে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমেই ব্যক্তির মধ্যে কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।
(8)
সামাজিক বিকাশঃ– সমাজের রীতিনীতি মেনে
চলা, সকলের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করা। সকলের বিপদ আপদে পাশে থাকা, প্রভূতি বিষয়ে
তাদের সচেতন করে সামাজিক বিকাশ ঘটানো।